প্রতিবন্ধী কোটার ভিত্তিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করতে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলার ৮০ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। রিটে সম্প্রতি ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে নিয়োগে প্রতিবন্ধী কোটা থেকে নিয়োগ না দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হবে। ৮০ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া এ রিট দায়ের করবেন।
গতকাল মঙ্গলবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, কোটার ভিত্তিতে ৮০ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন প্রস্তুত করেছি। রিটকারীরা সবাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা আর্থিকভাবেও অসচ্ছল। তাই তাদের পক্ষে বিনা পয়সায় রিট মামলা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আইনজীবী বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে উত্তীর্ণ করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগে নারী কোটা, পোষ্য কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হয়েছে। অথচ প্রতিবন্ধী কোটায় কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আমি মনে করি, প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগ না দেয়ায় সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এ কারণে গাইবান্ধার মাহবুব শেখ, রংপুরের আবু জাহিদ, বাগেরহাটের পার্থ প্রতিম, নরসিংদীর পারুল বেগমসহ ৮০ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষে রিট আবেদন প্রস্তুত করেছি।
গত ১৪ ডিসেম্বর দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন।
প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০২০ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির অনুমোদিত পদ অনুসারে ৩২ হাজার ৫৭৭ পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও এটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চে মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল, ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নেয়া হবে। অবসরের কারণে ১০ হাজারের বেশি পদ খালি হওয়ায় পদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
কিন্তু লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে পদসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। পদ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেন চাকরিপ্রার্থীরা। চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চসংখ্যক শূন্যপদে নিয়োগ এবং পদসংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে ৬১ জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে স্মারকলিপিও দেন চাকরিপ্রার্থীরা। গত ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, প্রকৃত শূন্যপদ যাচাই-বাছাই শেষে ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। এখন বিজ্ঞপ্তির অনুমোদিত পদের সঙ্গে ৫ হাজার পদ বাড়ানো হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর অনলাইনে আবেদন শুরু হয়। আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ প্রার্থী। নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা তিন ধাপে নেয়া হলেও চূড়ান্ত ফলাফল একবারেই প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪০ হাজার ৮৬২ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৫৯৫ এবং তৃতীয় ধাপে ৫৭ হাজার ৩৬৮ জন।