আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, অংশগ্রহণ নির্বাচন নিয়ে ততই ধোঁয়াশা বাড়ছে। বিএনপিসহ বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অনড়। তারা নির্বাচনকালীন সরকার না দিলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে কিছু দল অংশ না নিলেও তারা সংবিধান রক্ষায় সময় মতো নির্বাচন দেবে।
সূত্র জানায়, জনগণের মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে এখন থেকে। তারা তাকিয়ে আছে ইসির দিকে। শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কোনো উদ্যোগ নেবে, না নাকি তাদের ছাড়াই নির্বাচন দেবে। বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন দিলে, সেটি কেমন গ্রহণযোগ্য হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় বিএনপিসহ বিরোদী দলগুলোর ভূমিকা কী হবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে জনমনে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল চলতি বছরের নভেম্বরের দেয়া হবে। ভোট হবে ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ থেকে জানুয়ারির ৫ তারিখের মধ্যে। এ নির্বাচন নিয়ে এখন থেকে কার্যক্রম চলছে। ইসি প্রস্তুত রয়েছে ভোটের জন্য।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, বিএনপি তো শুরু থেকেই আমাদের মানছে না। তারা ভোটে অংশ নিয়ে বলুক নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, দলগুলো নির্বাচন আসবে এটাই কাম্য। তারা আমাদের অধীনে একটা নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। অংশ নিয়ে বলুক যে ভোট সুষ্ঠু হয়নি। তারা (বিএনপি) শুরু থেকেই তো আমাদের মানছে না। আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াই নাকি স্বচ্ছ হয়নি। আইনের আওতায় প্রথম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারপরও বলা হচ্ছে-আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়নি। আমাদের তো কিছু করার নেই।
ইসির প্রতি অনাস্থা নিয়ে আনিছুর বলেন, আমরা বলিনি যে ইসির প্রতি অনাস্থা নেই বা ছিল না; কিন্তু যারা বলছেন তারা তো আমাদের প্রথম থেকেই বলছেন। যদি একটা নির্বাচনেও অংশ নিতো, তাহলে তো বলতে পারব আমরা প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি। তাহলে আস্থা-অনাস্থার বিষয়টি বলতে পারত। যারা অংশ নিয়েছে, তারা তো বলেনি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
সাংবাদিকরা এই কমিশনারের কাছে জানতে চান-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি বিএনপি আবারো বর্জন করে, তাহলে সেটি কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? জবাবে আনিছুর বলেন, এখনো ভোটের অনেক সময় আছে। অংশ না নিলে তখন বলা যাবে। এত আগবাড়িয়ে বলার সুযোগ নেই। আমাদের কাজ আর নেই। আমরা ওইভাবে হয়তো আর বসব না। আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই সংলাপের।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কোনো চাপ নির্বাচন কমিশনের ওপর নেই। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন সময় যে বক্তব্য দিচ্ছেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কোনো দলকে বাধ্য করা হচ্ছে না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সব দলকে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান করছি।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে দলগুলো চাঙা হচ্ছে। চলছে জোটের হিসাব-নিকাস। সক্রিয়তা দেখাচ্ছে বিএনপি জামায়াত। তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে টানাপড়েন শুরু হয় বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর ২০ দলের অনেক শরিক দল যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি বলে অভিযোগ করে। ওই সময় থেকেই জামায়াত অনেকটা ২০ দলের কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়। জোটের গুরুত্বপূর্ণ দলের নেতারা সক্রিয় ছিলেন না জোটের কার্যক্রমে। এ কারণে খুব একটা দৃশ্যমান ছিল না এ জোটের। বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে বোঝাপড়ার দূরত্বের কারণে এই জোট গুরুত্ব হারায় বলে নেতারা মনে করছেন। আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই ভেঙে গেছে এই জোট। জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা এরই মধ্যে ১১ দলীয় একটি জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। বাকি কয়েকটি দল মিলে আরেকটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া ২০ দলের অন্যতম শরিক জামায়াত ছোট কোনো জোটে যাচ্ছে না। তারা আলাদা করেই রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাবে। তবে বিরোধী দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে সমর্থন থাকবে জামায়াতের। বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ সব কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করবে দলটি। হঠাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হওয়ায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলটির নেতারা মনে করছেন। তারা বলেছেন, দলের আমিরকে গ্রেপ্তার করে চাপ প্রয়োগ করা হলেও সামনের কর্মসূচি থেকে সরে আসবে না জামায়াত। নেতাদের দাবি এতদিন তারা দল গোছানোর কাজ করেছেন। এখন মাঠের আন্দোলনকে চাঙা রাখতে তারা প্রস্তুত।
২০ দলের বাইরের বাম এবং মধ্য ধারার যে সাতটি দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে যে জোট গঠন করেছে তারাও বিএনপিঘোষিত ১০ দফা দাবি এবং যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সক্রিয় রয়েছে। চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই জোটের আত্মপ্রকাশকে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেন। বিএনপি চাইছে এসব জোটের বাইরে থাকা আরও কিছু দলকে নিজেদের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে। এসব দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও চলছে।
বিরোধী দলগুলোর এই জোটের তৎপরতার বিপরীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে সক্রিয় করারও চিন্তা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে জোটের নেতারা একাধিক বৈঠক করেছেন। কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারে ১৪ দলের আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের অংশগ্রহণ নেই। আগের দুটি সরকারে তাদের অংশগ্রহণ ছিল। এ কারণে পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে নেতাদের মধ্যে নানা অসন্তোষ ছিল। এজন্য তাদের তেমন তৎপরতাও দেখা যায়নি। কিন্তু সম্প্রতি বিরোধী দলগুলো সক্রিয় হওয়ায় ১৪ দলের পক্ষ থেকে একাধিক কর্মসূচিও পালন করতে দেখা যায়।