ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সামাজিক কর্মকাণ্ডে ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম

সামাজিক কর্মকাণ্ডে ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম

দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশের আরও ১১ গুণী ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে একই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত গুণিজনদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ড. মোহাম্মদ ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাস প্রতিনিধি, হুজ হু বাংলাদেশের সম্পাদক লুৎফুন নাহার তাপসী, প্রধান নির্বাহী নাজিনুর রহিমসহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিগত দিনে এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজসহ অনেকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজকরা জানান, ‘হুজ হু’ ১৮৪৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বের অনুসরণীয় গুণিজনদের পদক প্রদান ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করে আসছে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৩৩ হাজার গুণিজনের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করেছে হুজ হু। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির পথচলা শুরু ২০১৫ সালে। প্রতি ২ বছর অন্তর ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ এই অ্যাওয়ার্ড দিয়ে আসছে। এবার চতুর্থবারের মতো অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন-শিক্ষায় অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিল্প ও সংস্কৃতিতে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা, সাংবাদিকতায় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, শিল্প ও সাহিত্যে ড. অগাস্টিন ক্রুজ, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমাজসেবক ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম, ক্রীড়ায় শুটার সাবরিনা সুলতানা, কৃষিতে লায়ন কহিনুর কামাল, শিল্প-বাণিজ্যে এস এস গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মু. আবু সাদেক, উদ্যোক্তায় স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার সুলাইমান এস আযানী, নারী উদ্যোক্তায় ‘উই’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা, পেশাজীবী বিভাগে বিএসএমএমইউ উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, আজীবন সম্মাননা শিল্পী রফিকুন নবী এবং প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো হুজ হু বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ওই বছর পদকপ্রাপ্তরা হলেন-কৃষিতে শাইখ সিরাজ, শিল্প ও সংস্কৃতিতে সানজিদা খাতুন, শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, সাংবাদিকতায় তোয়াব খান, শিল্প ও সাহিত্যে হাসান আজিজুল হক, সামাজিক কর্মকাণ্ডে স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ক্রীড়া ক্ষেত্রে আকরাম খান, শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে রহিম আফরোজ গ্রুপের পরিচালক নিয়াজ রহিম, উদ্যোক্তা হিসেবে এ সি আই লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আনিস-উদ্দৌলা, ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, এনাম আলী এবং লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী।

২০১৮ সালে হুজ হু বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই বছর পদকপ্রাপ্তরা হলেন-কৃষিতে ড. এম এ রহিম, শিল্প ও সংস্কৃতিতে আলী জাকের, শিক্ষা ক্ষেত্রে ড. রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিকতায় গোলাম সারওয়ার, শিল্প ও সাহিত্যে সেলিনা হোসেন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভেলেরি এন টেলর, ক্রীড়া ক্ষেত্রে কাজী মো. সালাউদ্দিন, উদ্যোক্তা হিসেবে ব্রিটানিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জেপি, ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

২০২০ সালে পদকপ্রাপ্তরা হলেন-শিক্ষায় জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহেলা খাতুন, শিল্প ও সংস্কৃতিতে মুস্তাফা মনোয়ার, সাংবাদিকতায় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, শিল্প ও সাহিত্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমাজসেবক খন্দকার মহিউদ্দীন, ক্রীড়ায় জোবেরা রহমান লিনু, কৃষিতে পূর্বাঞ্চলের কৃষক জাগরণের নায়ক মো. আব্দুল বাসির বদু মিয়া, শিল্প-বাণিজ্যে আবদুল হালিম পাটোয়ারী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুল হালিম পাটোয়ারী, উদ্যোক্তায় অরচার্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক, নারী উদ্যোক্তায় বিবি রাসেল, আজীবন সম্মাননায় কণ্ঠযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেনু।

অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের অবদান দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে-তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

দেশের গুণিজনদের অ্যাওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করায় হুজ হু বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ ২০২২ অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, যাদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হচ্ছে, তাদের অবদান দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। যে কোনো সম্মাননা কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে। এ ধরনের অ্যাওয়ার্ড দিয়ে ‘হুজ হু বাংলাদেশ’ দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকার রাখছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে নিহত হওয়ার কারণে তা পূরণ করতে পারেননি। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।

এসময় বাঙালি জাতির স্বকীয়তা বজায় রাখতে নিজস্ব সংস্কৃতি লালন ও রক্ষায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষ্টি আজকে নানা হুমকির সম্মুখীন। কারণ, আমাদের ছোটবেলায় আমরা দেখেছি, আমাদের অগ্রজরা বাড়িতে কোনো বিয়ের সময় সপ্তাহ ধরে বাংলা গানের চর্চা করত, সেগুলো গায়ে হলুদ এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করবে বলে। আজ সেখানে অন্য ভাষার গানের চর্চা হয়।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কোনো জাতির সংস্কৃতিকে যখন ভিনদেশি সংস্কৃতি গ্রাস করে, তখন জাতির স্বকীয়তা হারিয়ে যায়। তাই এই ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে।

কাজী রফিকুল আলমের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা : ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের (ডাম) সভাপতি কাজী রফিকুল আলম যুক্তরাজ্য থেকে শিক্ষায় বিশেষত্বসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করেন। তিনি ৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিচালক (পরিকল্পনা) পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে কোনো বেতন বা ভাতা ছাড়াই দুস্থ মানবতার সেবায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনে (ডাম) পূর্ণকালীন হিসেবে যোগদান করেন।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে দুস্থ ও অতি দরিদ্রদের লক্ষ্য করে তিনি ডামের মানবিক কর্মকাণ্ডকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন। তার গতিশীল নেতৃত্বে, ডাম এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী এনজিও-ইউনেস্কো লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়। তিনি বর্তমানে- Campaign for Popular Education (CAMPE)-এর চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ রিডিং অ্যাসোসিয়েশন (বিআরএ)-এর সভাপতি। কাজী রফিকুল আলম টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এডুকেশন ফর অল (ইএফএ), ইউনেস্কো, প্যারিসের সদস্য ছিলেন। তিনি ইউনেস্কো রিসোর্স পার্সন হিসেবে এশিয়া-প্যাসিফিক কালচারাল সেন্টার ফর ইউনেস্কো-জাপান এবং আইসেসকোসহ সবার জন্য শিক্ষা প্রচারে বিশ্বব্যাপী ৮০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক কর্মশালা পরিচালনা করেছেন।

কাজী রফিকুল আলম বেসরকারি খাতে উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন এবং আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আউস্ট) প্রতিষ্ঠা করেন। এর বাইরে তিনি বেশ কয়েকটি মূলধারার স্কুল, কলেজ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানীর উত্তরায় বেসরকারি খাতে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ৫০০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল নো-লস-নো-প্রফিট ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে দরিদ্র রোগীরা তুলনামূলক স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকে।

তাঁর উদ্ভাবিত মাল্টি-গ্রেড টিচিং-লার্নিং (এমজিটিএল), প্রারম্ভিক শৈশব উন্নয়ন (ইসিডি), ইউনেস্কোর কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার (সিএলসি), যা সারাদেশে গণকেন্দ্র নামে পরিচিত, সারাদেশে ২০০টি কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার (সিআরসি) প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এই ধরনের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় তার অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন।

গত সাড়ে তিন দশকে কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে দুই কোটিরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত দুস্থ মানুষের সেবা করা হয়েছে। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, জীবিকা, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারসহ বিভিন্ন সেবা পেয়েছেন।

কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ইউনেস্কা কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার, আইসেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার, এজিফান্ড ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ, গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক অ্যাওয়ার্ডসহ ২০টির অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। জাতীয় পর্যায়েও কাজী রফিকুল আলমের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতা পুরস্কারসহ ১৬টি পুরস্কার লাভ করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত