ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতবস্ত্রের অপেক্ষায় ছিন্নমূল মানুষ

* সারা দেশে কনকনে শীত * ৩০০ কম্বল পেয়ে কাউন্সিলের আক্ষেপ
শীতবস্ত্রের অপেক্ষায় ছিন্নমূল মানুষ

নতুন বছরের শুরুতেই দেশে জেঁকে বসেছে শীত। এতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষ। শীতার্ত অসহায় ও দুস্থদের উষ্ণতা দিতে সারা দেশে কম্বল দিয়েছে সরকার। তবে চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ওয়ার্ড ও গ্রামগঞ্জে কম্বল বিতরণ করতে গিয়ে বিড়ম্বণায় পড়েছেন জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। কনকনে শীতের মধ্যে শীতবস্ত্রের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের ছিন্নমূল মানুষ।

জানা গেছে, এবারের শীতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভান্ডার থেকে ৬৪ জেলায় ২৬ লাখ ৩৩ হাজার কম্বল গরিব ও দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্রের নির্দেশনা মোতাবেক জেলাভিত্তিক কম্বল বরাদ্দের বিভাজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন শর্তে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১৫ হাজার কম্বল দিয়েছে প্রত্যেক জেলায়। এসব কম্বলের অধিকাংশ বিতরণ শেষ হয়েছে। কনকনে শীতের মধ্যেও খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশাচালক কিংবা দরিদ্র মানুষ কাজ করছেন। তবে এসব মানুষের অধিকাংশের গরম কাপড় নেই। তাদের এ কষ্ট লাঘবে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের কম্বল অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। তবে অনেকে বলেছেন, প্রতিবারই শোনা যায় সরকারি কম্বল দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা কখনো পাইনি।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড শীত পড়ছে। অসহায় ও দুস্থ মানুষদের উষ্ণতা দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২২ হাজার ৫০০ কম্বল পাঠানো হয়েছে। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১৫ হাজার কম্বল দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিওয়ের মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড ও গ্রামে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, অসহায় ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণে ১৫ হাজার কম্বল পেয়েছি। ইতোমধ্যে সাড়ে ১৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা শেষ হয়েছে। আর মাত্র ৫০০ কম্বল রয়েছে। দিনাজপুরে অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী। রংপুর সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন। তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চলে শীতের প্রকোপ অনেক বেশি। এ কারণে সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিশেষ করে কম্বল বিতরণ শুরু করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে পরিকল্পিতভাবে কম্বল বিতরণ করা হবে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ছিন্নমূল ও দরিদ্র শ্রেণির জনগোষ্ঠীর পাশে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গ্রামগঞ্জে কম্বল বিতরণ হলেও রাজধানীতে মানুষ ঠান্ডায় কাঁপছে। গুলিস্তান, মতিঝিল, কমলাপুর, উত্তরা ও আব্দুল্লাপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছিন্নমূল, দিনমজুরি, রিকশাচালকরা শীতের কাপড়ের অভাবে জীনশীর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। গুলিস্তানের মাজেদুল ইসলামের (৫৫) উস্কখুস্ক চুল। শীতের প্রকোপে ফেটে গেছে শরীরের চামড়া। মলিন জামা আর তালি দেয়া চাদর পরে আছেন। একই অবস্থা মতিঝিলের আমেনা বেগম ও শনিরআখড়ার জাহিদের। তাদের পরিবারের সদস্য বেশ কয়েকজন। কিন্তু সেই অনুযায়ী নেই শীত ঠেকানোর ব্যবস্থা। প্রতিবছর শীতে নাজেহাল অবস্থা হয় তাদের পরিবারের। প্রায় রাতেই ঘুমাতে খুব কষ্ট করতে হয়। এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে শীতবস্ত্র খুব কম থাকায় তারা পাচ্ছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডটি নন্দীপাড়া ১নং ওয়ার্ড অংশ (পশ্চিম নন্দীপাড়া, রসুলবাগ, উত্তর নন্দীপাড়া), নন্দীপাড়া ২নং ওয়ার্ড অংশ (মধ্য নন্দীপাড়া, নন্দীপাড়া স্কুল রোড, ইমামবাগ), নন্দীপাড়া ৩নং ওয়ার্ড অংশ (নন্দীপাড়া, পূর্ব নন্দীপাড়া, নেওয়াজবাগ, ব্যাংক কলোনী) নিয়ে গঠিত। এখানে চাহিদার তুলনায় সিটি করপোরেশন থেকে খুবই সামান্য কম্বল পেয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজিজুল হক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, শীতার্ত অসহায় ও দুস্থ মানুষদের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে মাত্র ৩শ’ কম্বল দিয়েছে। অথচ এই ওয়ার্ডে ৪ হাজারের মতো কম্বলের প্রয়োজন। একই অবস্থা প্রতিটি ওয়ার্ডে। অনেকেই সরকারি বরাদ্দের শীতবস্ত্র না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, এসব কম্বলে শীত নিবারণের মূল উপাদান উলের পরিমাণ কম। ফলে সরকারি কম্বল পেয়েও শীত কাটছে না শীতার্তদের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মো. সেলিম হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বেশকিছু দিন আগেই প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় কম্বল পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসব কম্বল বিতরণ করছেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এবার শীতার্তদের জন্য কম্বল কিনতে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। প্রতি জেলা ৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে টাকা ভাগ করে দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সিটি করপোরেশনের অনুকূলে সরকারি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত