এ বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখেই নতুন নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে বিরোধী দলগুলো এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে নিজ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাঙা করছে রাজনৈতিক দলগুলো।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই জেলা-উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে ঘর গুছিয়ে এনেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। আর দলটির ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি ঝালাই করে নিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। নেতৃত্বের পালাবদলে তেমন কোনো পরিবর্তন না করে অভিজ্ঞ নেতাদের ওপরই আস্থা রেখেছেন তিনি। আর নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে সাংগঠনিক বিষয়গুলোর উপর জোরাল পদক্ষেপ নিচ্ছে দলটি। তৃণমূলে ঐক্য ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে যাওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা ৪র্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী অবস্থানে নিতে এ বছর কয়েকটি বাধা অতিক্রম করতে হবে দলটিকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে ফের বিজয়ী হতে এ বছরে বেশ কয়েকটি বড় বাধা অতিক্রম করে আগাতে হবে আওয়ামী লীগকে। এসব বাধার মধ্যে রয়েছে- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি মোকাবিলা, বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক আন্দোলন সামাল দেয়া, প্রভাবশালী রাষ্ট্রের কূটনীতিক তৎপরতার বিষয়ে কৌঁসুলি ভূমিকা পালন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় জনমত গঠন, দলীয় কোন্দল নিরসন, সংসদ নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই, সামাজিক মাধ্যমে গুজব-অপপ্রচারের যৌক্তিক জবাব এবং বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব দলকে নির্বাচনমুখী করা। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সেটি দেশের ভেতর ও বাইরে প্রশংসিত হবে। এই বাধাগুলো অতিক্রম করতে পারলে আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছে সেজন্য দলটিকে আবারও ক্ষমতায় আসতে হবে। এ জন্যই আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বদ্বিতাপূর্ণ হবে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না, মুখে বললেও তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য আওয়ামী লীগকেও সেই ভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ অগণতান্ত্রিক দলগুলো সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বিদেশিরা যেন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেজন্য তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যেন জঙ্গিবাদ সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য গ্রামগঞ্জে-পাড়া মহল্লায় ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে।
দলটির আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, নির্বাচনের বছরে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকেই। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি ও সামর্থ্য আওয়ামী লীগের আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব বাধা অতিক্রম করতে আমরা সক্ষম হব। শেখ হাসিনা সততা, দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও মেধা দিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছে, আগামীতেও থাকবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নতুন বছরে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতা রাখা। বিশ্ব মন্দার মধ্যে দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সহায়তা করা। আর দেশবিরোধী অপপ্রচারের জবাব দেয়া এবং আওয়ামী লীগকে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসবে বলে আমি মনে করি। সেই ভাবেই আমাদের দলের প্রস্তুতি নিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ বছর আমরা জনগণের কাছে আগামী দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাব এবং প্রত্যাশার কথা জনগণের কাছে তুলে ধরব। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা, আশা ও স্বপ্ন পূরণের বছর এটি। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আবারও সরকার গঠনের লক্ষ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, চলতি বছর আওয়ামী লীগের জন্য হবে চ্যালেঞ্জিং। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে জনগণকে স্বস্তিতে রাখা এবং উন্নয়ন ও মানবকল্যাণের ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করবে সরকার। আর দল ব্যস্ত থাকবে দেশবিরোধী অপশক্তি প্রতিহত করে সব শ্রেণি-পেশার নাগরিককে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে।