ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীত-কুয়াশায় বিপর্যস্ত দেশ

* শৈত্যপ্রবাহ আরও বাড়তে পারে * নব্বই সালের পর কুয়াশা বেড়েছে: আবহাওয়াবিদ
শীত-কুয়াশায় বিপর্যস্ত দেশ

সারা দেশে গত দুই বছর খুব একটা শীতের দেখা মেলেনি। তবে চলতি বছরে হাড় কাঁপানো শীত নেমেছে। পশ্চিমা বায়ু হিমালয়ের নিচের দিকে নামায় ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গতকাল উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায়ও সূর্যের দেখা মেলেনি। হিমালয় থেকে গঙ্গা অববাহিকা হয়ে আসা কুয়াশা ও শীতল বাতাসের প্রবাহে দেশের বেশিরভাগ এলাকার তাপমাত্রা নিচের দিকে নামে। শীতের এই তীব্রতা আরও দুই দিন থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা বেশি থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে উঞ্চতাও বেশি থাকে, আবার তাপমাত্রা কমলে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শীত অনুভূত হয়। ১৯৯০ সালের পর থেকে কুয়াশা আস্তে আস্তে বাড়ছে।

ভৌগোলিক কারণে শীতকালে বাংলাদেশ থেকে সূর্যের অবস্থান দূরে চলে যায়। এ সময়ে দিন ছোট আর রাত বড় থাকে। প্রথমত, সূর্যের দূরত্বের কারণে বাংলাদেশ পর‌্যাপ্ত উত্তপ্ত হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, দিন ছোট হওয়ায় ধরণী উত্তপ্ত না হতেই রাত নেমে আসে। ফলে বাংলাদেশে এই সময়ে শীতের অনুভূতি তীব্র হয়। কিন্তু হিমালয়সহ সাইবেরিয়ান অঞ্চল থেকে যদি শীতল বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশে বেড়ে যায় তখন শীতের অনুভূতিও বেড়ে যায়।

গতকাল ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ আরও বাড়বে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় মাঝারী থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। নওগাঁ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বরিশাল জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিনয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বাড়তি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, জানুয়ারি দেশের সবচেয়ে শীতলতম মাস। এই সময়ে সাধারণত দিনের বেলায় যে তাপমাত্রা থাকে, তার চেয়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম তাপমাত্রা থাকছে গত কয়েক দিন ধরে। অর্থাৎ শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পাবর্ত্য চট্টগ্রামে শীত কিছুটা কম। কেননা পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সেখানে হিমালয়ের শীতল বাতাস প্রবেশে বাধা পায়।

শীত বাড়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ সৈয়দ আবুল হাসানাৎ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নব্বই সালের আগে তিন থেকে চার দিন একটানা কুয়াশা পড়ত। এরপর থেকে দীর্ঘমেয়াদি কুয়াশার মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের মতো ২০০৭ ও ২০১১ সালে দীর্ঘদিন শীত ছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে কুয়াশা পড়ছে। আর জলীয় বাষ্পে দূষিত পদার্থের বেশি উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। হিমালয় ছুঁয়ে আসা শীতল বায়ুর প্রভাবে কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. এম আসাদুজ্জামান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দুই বছরের শীত ও গরমের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে, এটি বলা যাবে না। জলবায়ু কোনো এলাকার আবহাওয়ার দীর্ঘকালব্যাপী (কমপক্ষে ৩০ বছর) পর্যবেক্ষণে গড় অবস্থার প্রতিফলন। কোনো নির্দিষ্ট স্থানের দীর্ঘ সময়ের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, কুয়াশা, বরফ, শিলাবৃষ্টি ও আবহাওয়ার অন্যান্য উপাদানের গড় অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে জলবায়ু পরিবর্তন বলা যায়। আর আমাদের দেশে যে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে- সেখানে প্রচুর ধুলাবালি রয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, পশ্চিমা বায়ু সারফেস থেকে উপরের দিকে থাকলে শীতের তীব্রতা কমে, আবার সারফেস থেকে পশ্চিমা বায়ু নিচের দিকে নামলে শীতের তীব্রতা বাড়ে। শীতের তীব্রতা আরও কিছুদিন থাকবে।

মূলত উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত ঠান্ডা হাওয়ার কারণেই বাংলাদেশ ও এর আশপাশের অঞ্চলে শীত পড়ে। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশ অঞ্চলের বায়ুপ্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। ডিসেম্বরের শেষের কয়েকদিন পশ্চিমা বায়ু নিচে নেমে এসেছে, এতে শীত বেড়েছে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। রেল ও দূরপাল্লার বাস চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে বাস ও ট্রেন দেরিতে ছাড়ছে। গন্তব্যে পৌঁছাতেও বিলম্ব ঘটছে। কখনও কখনও পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টাও দেরি হচ্ছে। এর ফলে যাত্রীদের চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

তীব্র শীতের কারণে দেখা দিচ্ছে স্বাস্থ্য সমস্যাও। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে। শীতে রাজধানীতে বায়ু দূষণের মাত্রা চরম রূপ ধারণ করে।

কৃষকরা বলছেন, শীতের কারণে তাদের মাঠে কাজ করা যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে তেমনি ফসলের উৎপাদনও বিঘ্নিত হচ্ছে।

ঘন কুয়াশায় আকাশ থাকায় উত্তর পশ্চিমের শীতল বায়ুপ্রবাহ বেড়েছে। বঙ্গোপসাগরে প্রচুর জলীয়-বাষ্পপূর্ণ বাতাস থাকে এবং আকাশে মেঘমালার সৃষ্টি হয়। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। জলীয়-বাষ্পপূর্ণ শীতল বাতাস সাধারণত শীতের তীব্রতা বাড়ায়। ফলে এই বাতাস বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে এলে বাংলাদেশের নিম্নস্তরের বায়ু সেই জলীয় বাষ্প ধারণ করে, এজন্য তাপমাত্রা নিচে নামে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত