ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গোপালগঞ্জে যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী

দেশ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না

দেশ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ চলবে। এই মাটিতে বসে প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি কেউ যাতে গতিরোধ করতে না পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মী সজাগ থাকবে, দৃঢ় থাকবে। যে কোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।

গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার‌্যালয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির এক যৌথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে দলটির নতুন নেতৃত্ব আসার পর এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত টুঙ্গীপাড়ায় যৌথসভা অনুষ্ঠিত হলো।

সভার মুলতবি বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এই বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের প্রতি ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে-পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। খালেদা জিয়া ও তার কুলাঙ্গার পুত্র মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ হত্যা এবং অত্যাচার নির‌্যাতন করেছে।

তিনি বলেন, আগামীতে যদি একটা মানুষকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে যে হাত দিয়ে আগুন দিবে, ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে, তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হবে। এই কথাটা যেন সকলের মনে থাকে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, তারা আন্দোলন করতে চায় আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি আবারও নাশকতা করে, দেশের ক্ষতি সাধন করতে চায়, আর্থসামাজিক ক্ষতি করতে চায় তাহলে তাদের উপযুক্ত জবাব বাংলাদেশের জনগণ দেবে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের বিএনপি ৩০ আসনে বিজয়ী হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বোধহয় আপনাদের মনে থাকে না। ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল। পরে উপনির্বাচনে একটা। এটাই ছিল তাদের শক্তি। সে জন্য তারা নির্বাচন চায় না বা ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। শেখ হাসিনা বলেন, একই দিন ১০০ সেতু ও ব্রিজ এবং ১০০টি সড়ক উন্নত ও উদ্বোধন করা কী সর্বনাশ? এগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা উচিত। আমরা আছি জনগণের পাশে আর তারা আছে ধ্বংস করতে।

মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিনামূল্যে করোনা টিকা দেওয়াসহ অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা বলে আওয়ামী লীগ নাকি দেশের সর্বনাশই করেছে। তাহলে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কী তাদের সর্বনাশ করা? এগুলো কী মানুষের ক্ষতি সাধন করা? তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে ক্ষতিটা দেখলো কোথায়?

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, করোনা ও যেকোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়ানো থেকে প্রমাণিত হয় যে, দল সর্বদা জনগণের প্রতিটি দুঃখণ্ডকষ্টে পাশে থাকে। আমরা সর্বদা জনগণের পাশে আছি এবং জনগণের সেবা করাই আমাদের মূলমন্ত্র। দেশবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে যা যা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ সরকার সবই করে যাচ্ছে। শুধু আওয়ামী লীগ সরকারই নয়, দলের নেতাকর্মীরাও জনগণের প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

আগামীতে গোপালগঞ্জে এলে আগে কোটালিপাড়ায় যাবেন বলে নেতাকর্মীদের জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসময় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের টুঙ্গীপাড়া সফরের অনুরোধ জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সবার দাওয়াত থাকল, যে কোনও দিন টুঙ্গীপাড়ায় আসতে পারেন। আমাদের আতিথেয়তা নিতে পারেন। নবগঠিত কমিটির সকল সদস্য দেশবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এদিকে সভায় নতুন বছরের দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়, সেগুলো ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে- ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ মার্চই ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসসহ নানা কর্মসূচি।

এর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের নব-নির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতারা। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গতকাল দুপুর ১২টার পরে শ্রদ্ধা জানান তারা।

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর টুঙ্গীপাড়া ও কোটালিপাড়ায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এসব প্রকল্পের মধ্যে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বাকি ৯টি প্রকল্প শিক্ষা ও গণপূর্ত বিভাগ এবং টুঙ্গীপাড়া পৌরসভা বাস্তবায়ন করেছে।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

এরপর তারা ফাতেহা পাঠ করেন এবং জাতির পিতা ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার অন্য শহীদদের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত