ঢাকা ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে ফের চার বাংলাদেশি অপহৃত

* সাড়ে ৩ মাসে অপহরণ ৩১ জন * ক্যাম্পেও অস্থিরতা, ছুরিকাঘাতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে ফের চার বাংলাদেশি অপহৃত

কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আবারও স্থানীয় ৪ নাগরিককে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এরা পেশায় কৃষক। তাদের অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘবদ্ধ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে এসব কৃষককে অপহরণ করেছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এর আগেও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫ দফায় আরও ২৭ বাংলাদেশি নাগরিককে অপহরণ করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত প্রায় সাড়ে তিন মাসে অপহরণের শিকার হলেন ৩১ জন।

অপহৃতদের পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানা গেছে, বিভিন্ন সময় অপহৃতরা ভিন্ন ভিন্ন পরিমান অর্থ মুক্তিপণের বিনিময়ে পরিবারে ফিরেছিলেন। এর মধ্যে ১২ কৃষক ছিলেন একই উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের বাসিন্ধা। অপরদিকে গত বছর সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারাও ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ৩ দিন পর ছাড়া পেয়েছিলেন।

এদিকে স্থানীয় নাগরিকদের পাশাপাশি আতঙ্কে রয়েছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারাও। গত শনিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জামতলী ১৫ নম্বর ক্যাম্পে ছুরিকাঘাতে মো. রশিদ নামে এক রোহিঙ্গা নেতা নিহত হন। তিনি ওই ক্যাম্পের ব্লক-এ/৫ এর প্রধান মাঝি ছিলেন।

গত ৬ জানুয়ারি শুক্রবারও কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলিতে মোহাম্মদ নুরুন্নবী নামে এক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিকালে দুই পক্ষের ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু সময় গোলাগুলি চলে। পরে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে একটি গ্রেনেড উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বালুখালী-৮ ইস্ট ক্যাম্পের বি-৩৯ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, গতকাল রোববার ভোরে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং এলাকায় ক্ষেত পাহারারত এসব কৃষককে অপহরণ করা হয়। অপহৃতরা হলেন, লেচুয়াপ্রাং এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আব্দু সালাম, গুরা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান, রাজা মিয়ার ছেলে মুহিব উল্লাহ ও আব্দুল হাকিম।

চেয়ারম্যান আরও জানান- অপহৃত আব্দু সালামের ছোট ভাই মুন্সী রফিক ফোনে অপহরণের তথ্য জানানোর পর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশও গিয়েছে।

চেয়ারম্যান বলেন, অপহৃতের স্বজনরা জানিয়েছেন- স্থানীয় কৃষকরা ভুট্টা চাষ করেছেন। রাতে পাহাড় থেকে বন্যহাতির দল ভুট্টা ক্ষেতে আসে। হাতিগুলো পাহাড়ের দিকে তাড়িয়ে দিয়ে টং ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে ছিলেন ওই ৪ কৃষক। পরে সেখান থেকে ১৫-২০ সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে নিয়ে গেছে। ক্ষেতে রক্তের দাগও দেখা গেছে।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী আরও জানান, পাহাড় ঘিরে সংঘবদ্ধ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে। এর আগেও স্থানীয় অনেককে অপরহরণ করা হয়েছে।

টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন মজুমদার বলেন, পরিবারগুলোর কাছ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওসি আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল ঘটনাস্থলের আশে-পাশে অভিযান শুরু করেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, এ নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ দফায় ৩১ বাংলাদেশি নাগরিক অপহরণের শিকার হয়েছেন। যাদের অধিকাংশ মুক্তিপণ দিয়ে পরিবারে ফিরেছিলেন। এর মধ্যে শুধু হ্নীলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩ দফায় ১২ কৃষককে তারা অপহরণ করেছিল। সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ জনকে অপহরণ করা হয়। যারা ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ৩ দিন পর ছাড়া পেয়েছিলেন।

এছাড়াও গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ৪ জন, ১ অক্টোবর ২ জন, ৮ অক্টোবর ২ জন, ১০ নভেম্বর ১১ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।

ক্যাম্পেও অস্থিরতা, ছুরিকাঘাতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা : এদিকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জামতলী ১৫ নম্বর ক্যাম্পে ছুরিকাঘাতে মো. রশিদ নামে এক রোহিঙ্গা নেতা নিহত হয়েছেন। তিনি ওই ক্যাম্পের ব্লক-এ/৫ এর প্রধান মাঝি ছিলেন। নিহত মাঝি ওই ব্লকের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপস্ অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ নিহতের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মো. ফারুক আহমেদ বলেন, শনিবার রাতে ক্যাম্প ১৫-এর এ ব্লকের হেড মাঝি মো. রশিদকে ৩ জন দুষ্কৃতকারী ব্লক এ/৫ এ তার ২য় স্ত্রীর ঘরে ঢুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে আশেপাশের অন্যান্য রোহিঙ্গারা গুরুতর আহত রশিদকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। গভীর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত শত্রুতার জের হিসেবে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করে থাকতে পারে। ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে দাবি করে ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য ক্যাম্পে অতিরিক্ত এপিবিএন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত