ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সাংবাদিকদের ইসি রাশেদা

চলতি মাসে ইভিএম প্রকল্প পাস না হলে ব্যালটে ভোট

চলতি মাসে ইভিএম প্রকল্প পাস না হলে ব্যালটে ভোট

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) নতুন প্রকল্প পাস না হলে ১৫০ আসনে এই যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। এক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।

ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, ইভিএম প্রকল্প খুব একটা এগিয়েছে বলে মনে হয় না। প্রকল্পের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করবো বলে আমরা বলেছিলাম। এক্ষেত্রে প্রকল্প পাস না হলে আমাদের কাছে বর্তমানে যা আছে তাই দিয়েই ভোট করবো। মধ্য জানুয়ারির মধ্যে নতুন প্রকল্প পাস না হলে ব্যালটে যেতে হবে। সেই প্রস্তুতিও নিতে হবে। সময়মতো হলে তো ভালো। না হলে যা আছে তা নিয়েই করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব নিয়ে নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা হয়নি। এটার রীতিও নেই। ইসি সচিবালয় হয়তো কথা বলবে। আমাদের সক্ষমতা যা আছে তাই করবো। আমাদের সক্ষমতা তো জানামতে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো আছে। এখন কি আছে জানি না। ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে সরকারের কাছে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই প্রস্তাব এখনো পাস হয়নি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের বিষয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আরপিও বিল আকারে রেডি করছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমাদের কাছে পাঠাবে বলে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকা না থাকা নিয়ে কোনো সংকট নেই বলে জানান ইসি রাশেদা। তিনি বলেন, এটা নিয়ে যেন টানাহেঁচড়া না হয়, যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাই আমরা প্রযুক্তিবিদদের মতামত নিয়েছি। পরবর্তীতে কমিশন বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ ইসির অধীনেই এনআইডি থাকার পক্ষে। কেউ কেউ থাকার পক্ষে না। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানার জন্য বসেছিলাম। এখন আমরা নিজেরা বসবো। বসে তারপর সিদ্ধান্ত নেব। জিনিসটা যাতে সঠিক হয়, আমরা যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি এজনই প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বসেছিলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনআইডি নিয়ে টানাহেঁচহড়া যাতে না হয় বা গ্রহণযোগ্যতা পায় এইজন্যই ওনাদের সঙ্গে বসা। আমরা আলোচনা করি, বসি, তারপর কতটা খারাপ-ভালো হবে বলতে পারবো। তিনি আরও বলেন, আমরাও আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করবো। এখন কিছুই বলবো না। এনআইডি থাকা না থাকা নিয়ে কোনো সংকট নেই।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, যেহেতু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনআইডি ওনারা করবেন। আর ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, এটা ওনারা করেছে, এটা এখানে থাকাই ভালো। তাই এটা নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা আমাদের কাছে একটা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন এবং যুক্তি তুলে ধরছিলেন যে, ইভিএমে ভোট হলে এবং মন্ত্রণালয়ে এনআইডি চলে গেলে ভোট নিতে সমস্যা হতে পারে। যেহেতু বিষয়টা টেকনিক্যাল, তাই আইটি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ও মতামত জানতে চাওয়া হয়। আমরা সেগুলো শুনেছি। আমরা কোনো মতামত দেইনি। তিনি বলেন, ওনারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, টেকনিক্যালি কোনো সমস্যা হবে না। কারণ হলো, সার্ভার তো আমাদের কাছেই থাকছে। এটা কোনো সমস্যা না। ওনাদের থেকে মিশ্র বক্তব্য আসছে। একজন বলেছেন এটা তো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আপনারা কেন বাড়তি দায়িত্ব নিতে যাবেন? ইসির কাজ হলো ভোটার তালিকা করা, সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এটা তো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কাজেই না থাকাই ভালো।

কেউ বলেছেন-যেহেতু এটা সরকারেরই কাজ, তাই সরকার চাইলে নিতে পারে। তবে যেহেতু ইসি এটা করে আসছে দক্ষতার সঙ্গে, এক্ষেত্রে কমিশনের কাছেই যদি দক্ষতার সঙ্গে রাখা যায়। এখন অন্য কেউ কাজ করবে, সময় লাগবে, এতে মানুষ যে সার্ভিস পাচ্ছে, এটা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই সরকারকে যদি বোঝানো যায় যে, আপনারা চাইলে নিতে পারেন, তবে এটা এখানে থাকলে ভালো হয়। ওনারা আরও বলেছেন, ইভিএমে যেখানে ভোট হবে সেখানে শুধু এনআইডি ইনসার্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে নামটা চেঞ্জ করে ভোটার কার্ড করে দেবেন। যেহেতু অনেক মানুষ সার্ভিস নেওয়ার জন্য এনআইডি নেয়, এতে ভোটার হাওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে। তবে ভোট সুষ্ঠু হলে ভোটার হওয়ার আগ্রহ কমে যাবে না।

সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, আমরা ওনাদের কথা শুনেছি। এখন বসে কমিশন সিদ্ধান্ত নেব। সিইসি বলেছেন, আমরা যেটাই করি না কেন, যুক্তিযুক্ত হবে। কোনো পক্ষপাক্ষিত্ব হবে না। যেটা বেটার, যেটা লজিক্যাল সেটা করবো। সরকারের চাওয়া লজিক্যাল হলে চলে যাবে। আর না হলে আমাদের যুক্তি তুলে ধরবো। প্রসঙ্গত, সরকার এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত