ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএনপির চলমান যুগপৎ কর্মসূচি থেকে জামায়াতের পিছুটান

বিএনপির চলমান যুগপৎ কর্মসূচি থেকে জামায়াতের পিছুটান

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে সম্প্রতি ঢাকাসহ সারা দেশে গণমিছিল করে বেশ আলোচনায় আসে জামায়াতে ইসলামী। বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর পাশাপাশি জামায়াতও আলাদাভাবে ঘোষণা দিয়ে নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে একই কর্মসূচি পালন করে। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের আস্থাহীনতা বেড়েছে বলে জানা গেছে। তাই বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচি নিয়েও অবস্থান পাল্টেছে দলটির।

এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল বিএনপি ঘোষিত গণঅবস্থান কর্মসূচি সমমনা অন্য দলগুলো পালনের উদ্যোগ নিলেও পিছু হটেছে জামায়াত। এদিন তারা গণঅবস্থানের পরিবর্তে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে সব মহানগরে আলোচনা সভা করবে। একইভাবে বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচিতেও যুগপৎভাবে জামায়াতের মাঠে থাকা অনিশ্চিত বলে আভাস পাওয়া গেছে। তবে সরকারবিরোধী ইস্যুতে দলটি নিজস্ব কর্মসূচি পালন করবে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সূত্রমতে, গত বছরের শেষ দিকে ২০ দলীয় জোট অনানুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেয়ার মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির আনুষ্ঠানিক সম্পর্কেরও ইতি ঘটেছে। তবে দীর্ঘদিনের এ জোটসঙ্গীর সঙ্গে বিএনপির কৌঁসুলি সম্পর্ক বজায় আছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। এরই বহিঃপ্রকাশ দেখা দেয় বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে জামায়াতেরও গণমিছিলের মধ্য দিয়ে। এমনকি ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে বিএনপির ১০ দফার ভিত্তিতে কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সঙ্গে মিল রেখে জামায়াতও আলাদাভাবে ১০ দফার ভিত্তিতে একই ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে গত ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির পাশাপাশি গণমিছিল করে। এসব কর্মসূচি ঘিরে শোডাউনের সময় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ ও বহু নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। এছাড়া কর্মসূচি ঘোষণার দুই দিনের মাথায় গ্রেপ্তার হন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে দলের আমিরসহ অন্যান্য নেতাকর্মী গ্রেপ্তার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদণ্ডপ্রতিক্রিয়া না দেখানোর কারণে বেশ মনোক্ষুণ্ন হয়েছে জামায়াত। একারণেই মূলত বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচি থেকে দলটি পিছুটান দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তাছাড়া রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কোণঠাসা ও নিবন্ধন হারানো দলটির জন্য প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়াও চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে কেউ কেউ মনে করেন।

সূত্রমতে, জামায়াত পিছুটান দিলেও বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচির সঙ্গে একমত পোষণ করে আগামীকাল বুধবার গণঅবস্থান করার প্রস্তুতি নিয়েছে অন্তত ৩৬টি দল। এর মধ্যে চারটি জোট ও দুটি দল রয়েছে। এ কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার ১১ দলীয় ‘সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট’ ও ‘১২ দলীয় জোটের’ সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এসব বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। তবে এ নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কোনো বৈঠকের খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে গণমিছিলের প্রথম কর্মসূচি পালনের বিষয়েও জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আনুষ্ঠানিক বৈঠক বা যোগাযোগের খবর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য থেকেও বিরত থেকেছে বিএনপি। এখনও একই অবস্থানে আছে দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল এবং পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা মতামত দিয়েছি। নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করে গণঅবস্থান থেকে ঘোষণা করবে বিএনপি। রাজধানীর বিজয়নগরে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে জোটটি অবস্থান নেবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ কর্মসূচিতে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। এ নিয়ে বৈঠকে কোন আলোচনাও হয়নি।

একই ধরনের মন্তব্য করে ১২ দলীয় জোট নেতা ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, গতকালের বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে আমরা মতামত দিয়েছি। আমরা ঘেরাও, মানববন্ধন, গণসংযোগ ইত্যাদির প্রস্তাব দিয়েছি। এখন বিএনপি কর্মসূচি চূড়ান্ত করে আমাদের জানাবে। এ জোটটি বিজয়নগর পানিরট্যাংকি এলাকায় অবস্থান নেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১১ জানুয়ারি রাজধানীসহ সারা দেশের ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে চার ঘন্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।

গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলপূর্ব সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে প্রথমে এ কর্মসূচি সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা একঘন্টা পিছিয়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে বলে দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে বিভাগভিত্তিক সমন্বয় টিম গঠন করা হয়েছে। সমন্বয় টিম স্ব-স্ব বিভাগে সংশ্লিষ্ট নেতা এবং জেলা, মহানগর ইউনিটের নেতাদের সমন্বয়ে বৈঠক করে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বিভাগীয় সদরে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিবেন।

এদিকে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম গত ৮ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে ১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই দিন দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এই সরকারকে নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ বাদে দেশের সকল রাজনৈতিক দল অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানায়।

ওয়ান এলেভেনের এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য জামায়াতের সব মহানগর শাখাকে আলোচনা সভা আয়োজন ও দেশবাসীকে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে গণঅবস্থান না করার বিষয়ে জামায়াতের একজন নেতা জানান, আমরা গণঅবস্থান করতে সক্ষম। তবে দলের আমির গ্রেপ্তার ও এর আগে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করলেও এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার চিন্তা করছে জামায়াত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত