কক্সবাজারের টেকনাফে অপহৃত ৪ কৃষককে শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। মোবাইলে কল দিয়ে নির্যাতনের আর্তনাদ শোনান হচ্ছে স্বজনদের। দাবিকৃত মুক্তিপণ না দিলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে অপহরণকারীরা।
গতকাল মঙ্গলবার স্বজনদের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফের সংশ্লিষ্ট হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী।
তিনি জানিয়েছেন, অপহরণকারীরা যে ৪ জনকে ধরে নিয়ে গেছেন তাদের কাছে মোবাইল ফোন রয়েছে। অপহৃতদের মোবাইল ফোন থেকে স্বজনদের দফায় দফায় কল করা হচ্ছে। মোট ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি অব্যাহত রেখে চালানো হচ্ছে ব্যাপক নির্যাতন। নির্যাতনে কান্নার আর্তনাদ শুনানো হচ্ছে স্বজনদের। ফলে অপহৃতদের পরিবারের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
চেয়ারম্যান রাশেদ আরও জানান, অপহরণকারী চক্রের নিরাপদ আস্তানা গহিন পাহাড়ে হলেও লোকালয়ের সকল তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তিনিসহ পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থলে যাওয়া এবং সাংবাদিকদের ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের তথ্য তারা (অপহরণকারী) পাহাড়ে বসে পেয়ে যাচ্ছে। এতে সশস্ত্র অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ক্ষুব্ধ।
অপহরণকারীরা ফোনে এসব তৎপরতা থেকে বিরত থেকে দ্রুত মুক্তিপণের টাকা পরিশোধের আল্টিমেটাম দিয়েছে। না হলে অপহৃতদের হত্যার হুমকি দিয়েছে।
চেয়ারম্যান আরও জানান, এখনও পর্যন্ত কোথায় মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে হবে, কিভাবে পাঠাতে হবে এসব জানানো হয়নি। তবে এ পাহাড় ঘিরে স্থানীয় দৃষ্কৃতকারী ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সম্মিলিত অপহরণকারী চক্রের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। এরা কখনও পাহাড়ের পূর্ব পাশে হ্নীলা ইউনিয়ন, আবার কখনও পশ্চিম পাশের বাহারছড়া ইউনিয়নে অপহরণের ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব সশস্ত্র অপরাধীরা প্রযুক্তিগতভাবেও শক্তিশালী বলে মনে করেন এ জনপ্রতিনিধি। ঘটনার পর পুলিশের কিছু পদক্ষেপ দেখা গেলেও বর্তমানে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেই দাবি করে চেয়ারম্যান জানান, স্বজনরা আতঙ্কে রয়েছে। পাহাড় ঘিরে ধারাবাহিক অভিযানের দাবি জানান তিনি।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল হালিম বলেন, টেকনাফের হ্নীলা থেকে অপহৃত ৪ কৃষকের পরিবারের সদস্যরা এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ দেননি। প্রয়োজনীয় তথ্যও স্বজনরা দিচ্ছেন না। তবে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার প্রেক্ষিতে পাহাড় ঘিরে দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু অপহরণকারীরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, রোববার ভোরে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং এলাকায় ক্ষেত পাহারারত এ ৪ কৃষককে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। অপহৃতরা হলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আব্দু সালাম, গুরা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান, রাজা মিয়ার ছেলে মুহিব উল্লাহ ও আব্দুল হাকিম।
এ চারজনসহ গত সাড়ে ৩ মাসে টেকনাফে ৩১ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
