বিনামূল্যে চাহিদা মিটবে দেড় কোটি মানুষের

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচএম ফারুক

উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা সরকারের ফোর্থ জেনারেশনের ‘সেফালোস্পোরিন’ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি প্রকল্প অবশেষে এ মাসেই পূর্ণদমে উৎপাদনে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মাধ্যমে সরকার বছরে দেড় কোটি মানুষকে বিনামূল্যে ‘সেফালোস্পোরিন’ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন। বগুড়ায় স্থাপিত সরকারের স্বপ্নের সেফালোস্পেরিন প্রকল্পটি এ মাসের যে কোনো সময় উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, এ মাসের শেষ দিকে যে কোনো সময় প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এখানে স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনজেকশন পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু হবে। এছাড়াও এই প্রজেক্টে সিরিয়াস রোগের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে ব্যবহার হয় এমন সেফট্রাইক্সেন, সেফুরোক্সাইম, সেফটাজিডিম ও সেফরাডিন’র মত ১২টি জীবন রক্ষাকারী স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে যাবে। যুগোপযোগী উৎপাদন নীতিমালা অনুযায়ী অত্যাধুনিক মেশিনে মান নিশ্চিত করে উৎপাদিত এসব জীবন রক্ষাকারি ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের সরবরাহ করবে সরকার ও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এতে একদিকে যেমন বছরে দেড় কোটি মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ সহজ হবে, তেমনি বছরে ন্যূনতম ১৫০ কোটি টাকার রাজস্বও যোগ হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে অ্যান্টিবায়োটিকের যে উচ্চ মূল্য তাতে সাধারণ রোগীরা ক্রয় করে ঠিকমত ওষুধ সেবন করতে পারেন না। ওষুধের উচ্চ মূল্যের বাজারে লাগাম টানতেও ভূমিকা রাখবে ইডিসিএলের এ উদ্যোগ। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ মূল্যবান ওষুধ বিনামূল্যে পাবেন বলেও জানান ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল।

২০০৫ সালে নেয়া এ প্রকল্পটি অবহেলায় পড়েছিল জানিয়ে এসেনশিয়াল ড্রাগসের এমডি আরও বলেন, সরকার স্বাস্থ্যখাতে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখে চলেছেন। তার ধারাবাহিকতায় ইডিসিএলের অবহেলায় পরে থাকা বগুড়ার এই ফোর্থ জেনারেশনের ‘সেফালোস্পোরিন’ অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির প্রকল্পটিকে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ প্রকল্পকে উৎপাদন উপযোগী করতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন।

জানা গেছে, সেফালোস্পোরিন গ্রুপের ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লি. বগুড়া ইউনিটের বর্ধিতাংশে নতুন এ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। কিন্তু পরবর্তী ১১ বছর নতুন এই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালে ইডিসিএলের এমডির দায়িত্ব পাওয়ারপর মৃতপ্রায় প্রকল্পটির কাজ ২০১৬ সালে নতুন করে শুরু করেন অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জগলুল। ঢেলে সাজানো এবং যুগোপোযোগী উৎপাদন নীতিমালা অনুসরণ করে ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে দুই ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। প্রথম ধাপে ননস্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক (ক্যাপসুল ও ড্রাইসিরাপ) এবং দ্বিতীয় ধাপে স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক (ইনজেক্ট্যাবলস) উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা হাতে নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে প্রথম ধাপের কাজ শুরু করে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে অসম্পূর্ণ উৎপাদন বিভাগ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগ, স্টোর বিভাগ এবং ইউটিলিটিজ বিভাগ যুগোপযোগী ও সর্বাধোনিক উৎপাদন নীতিমালা অনুযায়ী রেনোভেট বা সংস্কার করা হয়। সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি ও পূর্বে আমদানিকৃত ফেলে রাখা যন্ত্রপাতিকে ব্যবহারোপযোগী করা হয়েছে। বর্তমানে ওই প্রকল্পের একটি অংশে পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধনেরপর ৬টি ননস্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক সেফিক্সিম ২০০, সেফিক্সিম ৪০০, সেফরাডিন ৫০০ ক্যাপসুল এবং সেফিক্সিম ৫০ মিলি, সেফিক্সিম ১০০ মিলি , সেফরাডিন ১০০ মিলি ড্রাইসিরাপ উৎপাদন করছে। এতে করে প্রতি বছর সেফালোস্পোরিন প্রকল্পের ননস্টেরাইল বিভাগের মাধ্যমে ৫০ থেকে ৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব যোগ হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইনজেকশন বা স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের লক্ষ্যে পূর্বের অপরিকল্পিত ভাবে নির্মীত অবকাঠামো পরিবর্ধন, পরিমার্জন, যুগোপযোগী ও সর্বাধুনিক করতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে উৎপাদন উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। একই সাথে পূর্বে আমদানিকৃত অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী করে তুলে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা হয়।

এমডি আরও বলেন, সরকারের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহে ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধিতে আরও সক্ষমতা অর্জনের জন্য গোপালগঞ্জে একটি বিশাল ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছে।

উল্লেখ্য, ছয় দশক আগে প্রতিষ্ঠিত তৎকালিন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আজকের এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। ১৯৬২ সালে যাত্রা শুরু পর নানা সংকট-সম্ভাবনায় দীর্ঘ পথ-পরিক্রমা। ইডিসিএল অনেক সময় থমকেও দাঁড়িয়েছে। অনিয়ম আর দ্বন্দ্বে জরাজীর্ণ অবস্থায় পতিত হয়েছিল সম্ভাবনাময় ইডিসিএল।