মাঠেই ছিল আওয়ামী লীগ
বিএনপির আন্দোলন ভুয়া : ওবায়দুল কাদের
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের পতনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্তক পাহারায় ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। পাল্টাপাল্টি না হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভা ও শান্তির সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠেই ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় যোগ দিতে গতকাল সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডে শান্তির সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মহাসমাবেশ করেন। ফার্মগেটে একই কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ। এদিকে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে সতর্ক পাহারায় বসে ছিল ছাত্রলীগ। বিএনপি ও সমমনাদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ সব কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে। তাদের আন্দোলন ‘ভুয়া’। বাংলাদেশে কোনো অপশক্তির জায়গা হবে না। বিএনপির সঙ্গে দেশের জনগণ নেই, দেশবাসী তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে বিএনপি। তারা অনির্বাচিত সরকার চায়। তাদের প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশে কোনো অপশক্তির জায়গা হবে না।
আওয়ামী লীগের নেতারা আরও বলেন, বিএনপি নতুন করে আবার দেশে বিশৃঙ্খলা করার ষড়যন্ত্র করছে। কোনো বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারবে না। কেউ মাথাচাড়া দিলে আমরা তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করবো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ সকল কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে। তাদের আন্দোলন ভুয়া। তারা বসে আছে ফুটপাতের উপর, মঞ্চও সেটা, স্রোতাও সেখানেই, সবাই ফুটপাত কেন্দ্রিক। তারপরে এলডিপিরও দেখলাম সেই একই দৃশ্যপট। তারা কয়েকজন হাতেগোনা বসে আছে। ৫৪ দল আজকে ব্যক্তি শেখ হাসিনার বিরেুদ্ধে। কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে, ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে। ১২ দলীয় জোট দেখলাম বিজয় নগরে সমাবেশ করেছে, সব মিলিয়ে ২৪ জন। ৭ দলীয় জোট প্রেসক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে, মঞ্চে ২০ জন, সামনে সাংবাদিকসহ আরও ১৫ জন। ১টা পর্যন্ত ৩ দল উপস্থিত ছিল চার দল নেই। ৭ দলীয় ঐক্যজোট তারপর সমমনা ১২ দল আর বিএনপি পল্টনজুড়েই আছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। কোনো বিরোধী শক্তি আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারবে না। মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। বিএনপিকে বাংলার মাটিতে আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যেতে পারে না। আবার ক্ষমতা পেলে তারা দেশ ধ্বংস করবে। এই দেশের গণতন্ত্র বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় আসলে স্বাধীনতার আদর্শ বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় আসলে গণতন্ত্রের বস্ত্রহানি ঘটবে। এই অপশক্তি জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক, সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক। বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কি দেখাবেন আপনারা? মুখে মিথ্যাচার আর বিশোধগার। আপনাদের নেই মেট্রোরেল, নেই পদ্মাসেতু, নেই বঙ্গবন্ধু টানেল, নেই উড়াল সেতু, নেই আন্ডার পাস, নেই এক দিনে শত সেতু, কে করেছে? শেখ হাসিনা। দুনীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, খেলা হবে, গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসিত করে যারা দায় মুক্তি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, যারা স্বাধীনতাকে নিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়নকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করবে, তাদের রাজপথে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে পঞ্চম বারের মতো শেখ হাসিনাকে আবারও জনগণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করবে।
আলোচনা সভায় দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, সেই অগ্রযাত্রায় সারা বিশ্ব যখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখনই এই দেশে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, যারা ২০১৩-১৪-১৫ সালে অগ্নি সন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, সেই অপশক্তি আবারও মাঠে নেমেছে। আসুন আমরা সবাই জাতির পিতার সোনার বাংলার স্বপ্নকে বুকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে অপশক্তিকে প্রতিহত করি। আজকে আমাদের এই প্রত্যয় হোক।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপাতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চলনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, অ্যাড. কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, উপ-প্রচার বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, কার্যনিবাহী সদস্য সানজিদা খানম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেসবাহুল হক সাচ্চু, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকীসহ অন্যারা।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে আদালত আদেশ দিয়ে মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। একটা মৃত ইস্যুকে জীবন্ত করবেন? -এটা অসাংবিধানিক, অস্বাভাবিক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা চাই না, জনগণ চায় না। বিএনপিকে এখন তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামাতে হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, আমাদেরও সেভাবে হবে। সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ সরকার নির্বাচনে করবে না।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুরে বিএনপির ওপর হামলার দাবি ভুয়া, মির্জা ফখরুল ভুল তথ্য দিয়েছেন। উল্টো বিএনপির কর্মসূচি থেকে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড কমিটি দ্রুত দেয়া নির্দেশ দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শেখ বজলুর রহমান ও এসএ মান্নান কচিকে বলব, যে কমিটিগুলো দেয়া হয়নি, দ্রুত দিয়ে দাও। কারণ, ভেতরে ভেতরে নেতাকর্মীরা হতাশ হলে, যে জোয়ার আপনারা তুলেছেন সেটা ভাটা পড়ে যাবে।
বিএনপির নেতাদের কান ধরে ক্ষমা চাইতে হবে : উত্তর যুবলীগের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক যুবলীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি উচ্চ পর্যায়ের নেতারা সরকার পতনের ডাক দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের বারবার বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু সরকার পতন এত সহজ না, কারণ এই সরকার জনগণের সরকার। মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা যদি সরকার পতন ঘটাতে না পারেন, তাহলে পল্টন কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাদের কান ধরে উঠবস করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
বিএনপি দেশের ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তারা এদেশে ভোট চুরি করেছে, এখন তারাই আমাদের ভোট ব্যবস্থা সংস্কার করতে বলে। এটা লজ্জার বিষয়। লজ্জায় তাদের মাথানত করে থাকা উচিত। আসলে তাদের লজ্জা নেই। কারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে? যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল সেই পরাজিত শক্তি ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সেই চক্রান্তকারীরা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
বিএনপিকে প্রতিহত করতে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যে পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিল তারাই ১৫ আগস্ট ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, কিন্তু তাদেরকে আর সুযোগ দেয়া হবে না। যুব সমাজকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে এই সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপি কর্মসূচি পালন করে সরকার হটানোর জন্য। তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছে। বিএনপি আবারও যদি রাস্তায় নামতে চায় তখনই প্রতিহত করা হবে।
সমাবেশের নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, অপরাধের দায়ে বিএনপি জামায়াতকে মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যুবলীগ তাদের অনেক ছাড় দিয়েছে, সামনে ছাড় দেয়া হবে না। আরেকবার মানুষের গায়ে হাত দিলে যুবলীগ সমুচিত জবাব দিবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সমাবেশ পরিচালনা করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ নাঈম, রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মনির মো. শহিদুল হক রাসেল, মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সেলিম, দপ্তর সম্পাদক এএইচএম কামরুজ্জামান কামরুলসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা যুবলীগের নেতাকর্মীরা।