ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশ ‘সত্যিকারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ : বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশ ‘সত্যিকারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ : বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক আজ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ফ্রন্টে ‘সত্যিকারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি ‘সত্যিকারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে তার সচিবালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। সেক বলেন, এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনেক ভালো। তিনি মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নদীপথ ও নদীভিত্তিক অর্থনীতির মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাংক কাজ করতে পারে।

তরুণদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ভিত্তিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলো এই যুবশক্তির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির কঠিন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশের জিডিপির আকার অনেক বেড়েছে এবং কানাডিয়ান অনলাইনভিত্তিক এজেন্সি ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে স্থান দিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরকে বাংলাদেশের জন্য কিছু আইকনিক প্রকল্প নেয়ার অনুরোধও করেন।

এছাড়া তারা ঢাকা মহানগরীর চার পাশের নদীগুলোর নাব্যতা নিশ্চিত করতে এবং রাজধানীর নান্দনিকতা বাড়াতে ‘ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধন’ প্রকল্পের সম্ভাব্য অর্থায়নের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেন।

এদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশে চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্ব অর্থনীতির মতো বাংলাদেশেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে সংস্থাটি থেকে বলা হয়েছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। তার আগে জুনে পূর্বাভাস দিয়েছিল, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস জানুয়ারি ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশার কথা জানিয়ে এই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির সদর দপ্তর থেকে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বিশ্বের প্রায় সবচেয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, বিনিয়োগ হ্রাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে মন্থর হচ্ছে। এ কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমে আসবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরো জোন, এমনকি চীনের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

২০২২ সালের জুনে সংস্থাটি বলেছিল, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হবে বলে আভাস দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার তা কমিয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনল। এই প্রবৃদ্ধি গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, করোনা মহামারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছিল, ২০২৩ সাল বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, পাকিস্তানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে হবে ২ শতাংশ; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ভুটানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, নেপালে ৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ নেগেটিভ (মাইনাস) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর আগে গত বছরের ৬ অক্টোবর প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। এর আগে জুনে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত