কে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আলোচনায় যারা

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম ও রাহাত হুসাইন

দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। নতুন করে এ পদে কে বসতে যাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি মাসের শেষে তফসিল দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ভোট করতে চায় সাংবিধাকি প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথমবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদেও এ দায়িত্ব পান। সংবিধান অনুযায়ী, তৃতীয় মেয়াদে তার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি এ নিয়ে সর্বত্রই চলছে আলোচনা। সংবিধান অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ বলছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। ৫০(৩) অনুচ্ছেদ বলছে, একাধিক হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। বর্তমান রাষ্ট্রপতি পরপর দুই মেয়াদে এ দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন।

আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারো শপথ নেয়ার কথা। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি দুই মেয়াদে থেকেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আর থাকতে পারেন না। সেহেতু আমরা নতুন রাষ্ট্রপতি দেখব। আবদুল হামিদকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হলে সংবিধান পাল্টাতে হবে। এখন পর্যন্ত সংবিধান পাল্টানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

রাষ্ট্রের শীর্ষ পদটির জন্য অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে এবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন একজন প্রধান সাবেক বিচারপতি। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদ থেকে মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সাংবিধানিক পদ থেকে জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এদিকে রাষ্ট্রপতির হওয়ার দৌড়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম নেতাকর্মীদের মুখে শোনা গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্য নয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। প্রধানমন্ত্রী আলাপ-আলোচনা করছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। সময় হলে জানতে পারবেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল অব. ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশের সবকিছু সংবিধান অনুযায়ী চলছে। তাই যথাসময়ে, যথা নিয়মে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। এজন্য সংবিধান সংশোধনের কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন এটা নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি।

৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান আছে সংবিধানে। রাষ্ট্রপতি সরাসরি ভোটে নয়, সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তফসিল ঘোষণাসহ এ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের মনোনীত প্রার্থীই হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন)-এর ৫ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। চলতি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত করতে হবে রাষ্ট্রপতির নাম। বর্তমান জাতীয় সংসদের ৩৫০ জন সদস্যের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। ফলে ক্ষমতাসীন দলটি যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, তিনিই হবেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

যেভাবে হবে নির্বাচন: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনি কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেয়ার পর সংসদকক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এ নির্বাচনে ভোটার। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদকক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনি কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিকসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।

যদিও ১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। আর ওই সময় বিরোধীদল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিজয়ী হন। এছাড়া প্রতিবার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর কমিশন গেজেটে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে একক প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।