ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আমবয়ানে প্রথম পর্ব শুরু

ইজতেমা মাঠে লাখো মুসল্লির জুমা আদায়

ইজতেমা মাঠে লাখো মুসল্লির জুমা আদায়

করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ ২ বছর বিরতির পর ধর্মীয় উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে গতকাল শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা। বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আমবয়ানের (সার্বিক) মধ্যদিয়ে শুরু হয় প্রথম পর্বের ইজতেমার মূল আনুষ্ঠানিকতা। তাবলিগ জামাতের আয়োজনে এ জমায়েতের প্রথম দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বড় জামাতে জুমার নামাজ আদায়। দেশ-বিদেশের তাবলিগ অনুসারীদের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার সাধারণ ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে জুমার জামাতের বিস্তৃতি পুরো ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এসময় টঙ্গী-গাজীপুর সড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিল।

সূত্র মতে, গতকাল শুরু হওয়া প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ পর্বের সমাপ্তি হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করার কথা রয়েছে কাকরাইল জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমদের। চারদিন বিরতি দিয়ে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হবে ২০ জানুয়ারি থেকে। এ পর্বের আখেরি মোনাজাত হবে ২২ জানুয়ারি।

দুই পর্বের এ বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের সেবায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত আছে। যাতায়াত সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে বশেষ সার্ভিস।

জানা গেছে, বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ৪ হাজার ৩৬১ জন প্রতিনিধিসহ দেশের কয়েক লাখ মুসল্লি এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। গতকাল ফজরের নামাজের পর ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই ইজতেমা মাঠে সববেত হন মুসল্লিরা। অনেকটা অনুকূল আবহাওয়া ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকায় ইজতেমায় আগত মুসল্লিগণ স্বাচ্ছন্দ্যে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের বয়ান শুনছেন এবং ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছেন।

এদিকে বরাবরের মতো এবারও ইজতেমা ময়দানে বৃহৎ জুমার নামাজে অংশ নিতে গতকাল সকাল থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে। সর্বস্তরের মুসলমানরা জুমার জামাতে শামিল হতে টুপি, পাঞ্জাবী পরে জায়নামাজ হাতে ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটে যান। দেশ বিদেশের অগণিত মুসল্লির সঙ্গে একই জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে সাওয়াব হাসিলের উদ্দেশে সবার মধ্যে দেখা যায় ব্যাকুলতা। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই মুসল্লিদের ঢল আঁচড়ে পড়ে তুরাগ তীরে। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের সমাবেশ ঘটে জুমার জামাতে। নামাজের কয়েকঘন্টা আগেই ইজতেমা মাঠ পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় মুসল্লিদের কেউ সামনের সড়কে, কেউবা আশপাশের বাড়ির ছাদে জায়গা করে নামাজের প্রস্তুতি নেন। দুপুর দেড়টার পর মাইকে জুমা নামাজের ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুসল্লিদের মধ্যে শুরু হয় ছোটাছুটি। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নামাজের জায়গা খুঁজে নিতে। বেলা ১টা ৪৭ মিনিটে শুরু হয় নামাজ। এসময় মুসল্লিদের পাশাপাশি পিনপতন নীরবতা নেমে আসে গোটা এলাকায়। স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল।

জানা গেছে, ইজতেমা ময়দানের জুমায় ব্যাপক উপস্থিত থাকলেও টঙ্গী, উত্তরা, কামারপাড়া, মিরপুর, আবদুল্লাহপুরসহ আশপাশের এলাকার মসজিদে মুসল্লি সংখ্যা ছিল খুবই কম। টঙ্গীর চেরাগ আলী থেকে জুমার নামাজ পড়তে আসা ফরহাদ হোসেন বাবু মুন্সী বলেন, বড় জামাতে নামাজ পড়লে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। তাই ৮০ জনের একটি দল আমরা একসঙ্গে ময়দানে নামাজ পড়তে এসেছি। গত দুই বছর ইজতেমা না হওয়ায় এবার বিপুল সংখ্যক মুসল্লির সমাগম হয়েছে। আশুলিয়া থেকে আসা মো. মৃদুল হাসান বলেন, ইজতেমার জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার অন্য রকম আনন্দ। তা ছাড়া এবার দুই বছর পর ইজতেমা হচ্ছে। তাই ভালো লাগাটাও অনেক বেশি। মাঠের ঢুকতে পারেনি, তবু মনে আনন্দ কম না। এদিকে ইজতেমা ময়দানের জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা দল বেঁধে নিজ গন্তব্যে ফেরা শুরু করলে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যানজট দেখা দেয়।

সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানান, জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে সকাল নয়টার পর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আজমপুর থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর কলেজ গেট পর্যন্ত যানবাহন চলছিল ধীরগতিতে। এর মধ্যে জুমার নামাজের আগ থেকে এক ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। নামাজ শেষে আবার যান চলাচল শুরু হলেও মুসল্লিদের ভিড়ের কারণে দেখা দেয় যানজট। পরে যানজট কমতে থাকলে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত যানবাহন চলাচলে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে।

উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকার ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, নামাজের জন্য কিছু সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে আবার সচল হয়। তবে সড়কে প্রচুর মুসল্লির হাঁটাচলা থাকায় যানবাহন চলাচল কিছুটা ব্যাহত হয়।

সূত্র মতে, গতকাল শুক্রবার ফজরের পর মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের পর সকাল ১০টায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করেন আলীগড়ের প্রফেসর সানাউল্লাহ। একই সময় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বয়ান করেন পাকিস্তানের ড. নওশাদ। মাঠে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশে বয়ান করেন হায়দরাবাদের মাওলানা আকবর শরীফ। আরব জামাতের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহীম দেওলা। জুমার আগে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। জুমার পর থেকে এশার আগ পর্যন্ত তিন পর্বে মাঠের মূলমঞ্চ থেকে ভারত ও বাংলাদেশের নির্ধারিত আলেমরা বয়ান করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত