ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এখনই হার্ডলাইনে যাচ্ছে না বিএনপি

এখনই হার্ডলাইনে যাচ্ছে না বিএনপি

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি ও শরিকরা। এরইমধ্যে যুগপৎ দুটি কর্মসূচি পালন করেছে সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১৬ জানুয়ারি পরবর্তী কর্মসূচির শিডিউল রয়েছে। তবে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন শুরুর আগে এ নিয়ে রাজনৈতিক ও সরকারি মহলে বেশ উত্তাপ থাকলেও বর্তমানে তা অনেকটাই কমে গেছে বলে জানা গেছে। কারণ গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে সরকার অনেকটা কঠোর অবস্থানে থাকলেও পরবর্তী কর্মসূচি পালনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহজেই অনুমতি পেয়েছে দলটি। এমনকি এসব কর্মসূচি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেকে উপহাস করে বক্তব্য দিতে শোনা গেছে। শুধু ক্ষমতাসীনরা নয়, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে দলটির শরিকদেরও অনেকে শুরুতেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। ১০ দফা দাবির এ আন্দোলন কত দিন চলবে, কী ধরনের কর্মসূচি আসবে- এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্টরা অনেকটাই অন্ধকারে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি আর ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে বিএনপি সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করলেও সহসাই তারা হার্ডলাইনে যাচ্ছে না। বরং এ আন্দোলনকে আরও দীর্ঘমেয়াদে চালিয়ে গিয়ে পর্যায়ক্রমে কঠোর অবস্থান নিতে চায় দলটি। গতকাল গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমনই আভাস দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারকে পরাজিত করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ১১ দলীয় ‘সমমনা জাতীয়তাবাদী জোটের’ সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলন কত দিন, কীভাবে চলবে তা আমাদের বলা হয়নি। তবে শনিবার আমাদের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের এক বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে হার্ডলাইনে যাওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব।

এদিকে গতকাল বিকালে গুলশান কার্যালয়ে দলীয় আরেকটি অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যে যুদ্ধে নেমেছি, এ যুদ্ধে আমরা জয়ী হবোই হবো। সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। তিনি বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী আটক রয়েছে। কিন্তু কারো মুখে ক্লান্তি, হতাশা দেখিনি, দেখেছি সবাইকে উজ্জীবিত। যতই নির্যাতন আসুক, যতই নিপীড়ন আসুক, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করব।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ব্যাপক আলোচিত বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল এবং পরবর্তীতে গত ১১ জানুয়ারি দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান পালন করেছে সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচির সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে তাতে অংশ নিয়েছে পাঁচটি জোটসহ ৩৭টি দল ও ১৫টি সংগঠন। তবে প্রথম কর্মসূচিতে আলাদাভাবে জামায়াতে ইসলামী মাঠে থাকলেও নানা ক্ষোভের কারণে ১১ জানুয়ারিতে তারা ছিল ভিন্ন কর্মসূচিতে। পরবর্তী ১৬ তারিখের কর্মসূচিতেও তাদের থাকার সম্ভাবনা নেই। কারণ একই ইস্যুতে গতকাল দলটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।

এদিকে গত ১১ জানুয়ারি বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও শরিকদের চিত্র ছিল উল্টো। আলাদাভাবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শরিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও তাতে উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তাছাড়া ১০ বিভাগে বিএনপি একই কর্মসূচি পালন করলেও শরিকদের কর্মসূচি ছিল ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ। এ নিয়ে বিএনপি মহলে চাপা ক্ষোভের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল থেকে নানা ‘উপহাসমূলক’ বক্তব্য দেয়া হয়। এসব দল নিয়ে বিএনপির সরকার পতনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না বলেও সংশ্লিষ্টরা ঘোষণা দেন।

বিএনপির আন্দোলনের রণকৌশল সঠিক পথে নেই বলে মন্তব্য করেছেন আন্দোলনের শরিক ‘গণঅধিকার পরিষদের’ সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের আন্দোলনের রণকৌশল সঠিক পথে নেই। বিরোধীদলের সঙ্গে বসে সঠিক রণকৌশল ঠিক করতে হবে। আপনাদের ম্যান পাওয়ার ও মানি পাওয়ার আছে। কিন্তু আপনাদের সমন্বয় হচ্ছে না। বিএনপিকে ছোট ছোট দল যেগুলোর সাপোর্ট নেই, তাদের সাপোর্ট দিয়ে কীভাবে আরও চাঙা করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।

বিএনপির চলমান যুগপৎ আন্দোলনের রোডম্যাপ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলে জানান, ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতির কোন পর্যায়ে আছে তা আমরা পরিষ্কার নই। এ আন্দোলন কতদিন মেয়াদি হবে তাও আমাদের স্পষ্ট করা হয়নি। অনেক ছোট দলকে আন্দোলনে যুক্ত করলেও জামায়াতের মতো অন্যতম একটি দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় আন্দোলনের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত