ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কূটনীতিকপাড়ায় তৎপরতা

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কূটনীতিকপাড়ায় তৎপরতা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনীতিবিদ, ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের পদচারণা ততই বাড়ছে। প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সরব হয়ে উঠছেন এসব মহল। সর্বশেষ ঢাকায় দুই দিনের সফরে এসেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। তিনিও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এর আগে গত নভেম্বর জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দেখতে চায় জাপান। এছাড়া গত ১৪ অক্টোবর ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টারও বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জার্মানি। জার্মানি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশ ভালোভাবে চলতে পারে না। একাধিকবার একই ধরনের বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে হবে। নির্বাচনে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক চর্চা করা হবে, যাতে ভোটাররা তাদের অধিকার স্বাচ্ছন্দ্যে প্রয়োগ করতে পারেন। নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলিও একই রকম মন্তব্য করেছেন একাধিকবার। এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিয়েনা কনভেনশনের ৪১ ধারা আইনটি স্মরণ করে দেয় বিদেশি কূটনীতিকদের। কারণ, এই আইনে বিদেশি কূটনীতিকদের স্বাগতিক দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে নাক গলানোর নিষেধ রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপের পর কূটনীতিকদের বক্তব্য কিছুটা কমেছে।

এ নিয়ে দেশের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ চায় না সরকার। সেজন্য আগেভাগেই কূটনীতিকদের ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলতে চিঠি দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের বিভিন্ন তৎপরতা নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। আগামী বছরের জানুয়ারিতে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিতসহ স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিভিন্ন মন্তব্য করছেন ও মতামত তুলে ধরছেন। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয় এবং এটা নিয়ে কূটনীতিকদের মন্তব্য বা বক্তব্য একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা নাক গলানো বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। যতদিন এগোবে এই তৎপরতা আরও বাড়বে। তবে এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি কূটনীতিকদের সতর্ক করা হয়েছে। কারণ, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ দেখতে চায় না সরকার।

গত রোববার ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমি মার্কিন পক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি যে, বর্তমান সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আওয়ামী লীগ বুলেটে নয় ব্যালটে বিশ্বাস করে। সরকার ভোটারদের ছবিসহ আইডি ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স নিশ্চিত করেছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে শক্তিশালী স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

একই দিনে ডোনাল্ড লুয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুইপক্ষের আলোচনা হয়েছে। ডোনাল্ড লু বলেছেন সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে এবং আমরা বলেছি সেটি আমরা মানি। সেজন্য তারা (বিএনপি) শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে, এতে আমাদের কোনো বাধা নেই। তারা যদি জনগণের সম্পত্তি নষ্ট করে, গুলি ছোড়ে বা রাস্তাঘাট বন্ধ করে, তখন আমরা তাদের বাধা দেব। অন্যথায় তারা সবকিছু করতে পারবে। রাজনৈতিক দল তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর করেছে এবং কিছু দিন আগেও করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় স্বার্থ নিয়ে বিভাজন থাকায় বিদেশি কূটনীতিকরা গণতন্ত্রের নামে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেন। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যেও গণতন্ত্রের ঘাটতি রয়েছে। উন্নত দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে উন্নয়নশীল দেশের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। এর বেশিরভাগই বাণিজ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত