অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সুপার সিক্সে বাংলাদেশ

অভিষেকেই বাজিমাত দিশাদের

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

পুরুষ ও মেয়েদের যেকোনো বিশ্বকাপে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে আগের ম্যাচেই ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। দিশা-মারুফা-স্বর্ণা-প্রত্যাশারা গতকাল হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশ। লাল-সবুজ মেয়েদের দেয়া ১৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৫৫ রানে থামে শ্রীলঙ্কা অনুর্ধ্ব-১৯ দলের নারী দলের ইনিংস। তাতে ১০ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দিশা বিশ্বাসের দল। ব্যবধান খুব বড় না হলেও আদতে রান তাড়ায় কখনো জয়ের মতো অবস্থায় মনে হয়নি শ্রীলঙ্কাকে। ম্যাচের শেষ তিন বলে তিনটি বাউন্ডারিতে তারা ব্যবধান কমায় কিছুটা। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ আগামীকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। জিতলে হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বেনোনির উইলমোর পার্ক স্টেডিয়ামে গতকাল আফিয়া প্রত্যাশা-স্বর্ণা আক্তার ব্যাট হাতে তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। দুজনের ফিফটিতে বাংলাদেশ পায় চ্যালেঞ্জিং স্কোর। বাকি দায়িত্ব ছিল বোলারদের। শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করতে না পারলেও লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই থামিয়ে দিয়েছে দিশা বিশ্বাসের দল। ৪ রানে প্রথম উইকেটে হারালেও শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ায় দ্রুত। অধিনায়ক ভিষ্মি গুনারত্নে সতীর্থ ডেউমি বিহঙ্গকে নিয়ে জুটি গড়ে উল্টো ছড়ি ঘোরাতে থাকেন। চতুর্থ ওভারে গড়া তৃতীয় উইকেটের জুটি মারুফা ভাঙেন ডেউমিকে (৫৫) বোল্ড করে। এই জুটি না ভাঙলে অন্যকিছুও হতে পারতো। ডেউমিকে ফেরাতে পারলেও ভিষ্মি অপরাজিত ছিলেন ৫৪ বলে ৬০ রান করে। ইনিংসের শেষ তিন বলে টানা তিনটি চার মারেন নতুন ব্যাটসম্যান ডুয়ালঙ্গা, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩ বলে ১২ রান করে। ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন মারুফা।

বাংলাদেশকে জয়ের মতো স্কোর এনে দেন প্রত্যাশা ও স্বর্ণা। আগের ম্যাচে দুটি করে ৪ ছক্কায় ২৪ করে আউট হয়েছিলেন প্রত্যাশা। এবার তিনি খেলেন ৪৩ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। যেখানে ৫ চারের সঙ্গে ছক্কা ছিল ৩টি। স্বর্ণা আগের ম্যাচে বিশাল এক ছক্কায় ১৮ বলে ২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জেতানো স্বর্ণা আরও একবার অপরজিত থাকেন ২৮ বলে ৫০ রান করে। তার ইনিংসে চার তিনটি, ছক্কা দুটি। দুর্দান্ত পায়ের কাজ, হাতের জোর আর দারুণ অভিপ্রায় দেখান ফিফটি করা দুই ব্যাটারই।

উইলোমুর পার্কে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ বড় স্কোরের ভিত পায় উদ্বোধনী জুটিতেই। প্রত্যাশা ও মিষ্টি সাহা দলকে এনে দেন ৭৫ রানের শুরুর। তবে জুটিতে দুই ওপেনারের ভূমিকা ছিল পুরো দুইরকম। প্রত্যাশার ব্যাট ছিল উত্তাল, অন্য প্রান্তে মিষ্টি ছিলেন দর্শক। ৭৫ রানের জুটিতে মিষ্টি করেন ২৪ বলে মাত্র ১৪ রান। দ্বিতীয় ওভারে রাশমি নেত্রাঞ্জলিকে ফ্লিক করে দারুণ টাইমিংয়ে চার মেরে প্রত্যাশার শুরু। পরের ওভারে দুটি চার মারেন পামোদা শাইনিকে। চতুর্থ ওভারে স্পিন আক্রমণে আনেন লঙ্কান অধিনায়ক। তাতেও কাজ হয়নি। অফ স্পিনার ভিহারা সেভান্দিকে লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন প্রত্যাশা। সেভান্দির পরের ওভারে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন প্রত্যাশা। এবার দুটি চারের সঙ্গে ওভারে মারেন আরেকটি ছক্কা। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৫২ রান। পরের চার ওভারে বাউন্ডারি আসেনি। রানের গতিও কমে আসে কিছুটা। একাদশ ওভারে দুলাঙ্গা দিসানায়েকের বলে ছক্কায় প্রত্যাশা ফিফটি পা রাখেন ৪১ বলে। প্রত্যাশার ইনিংস থেমে যায় পরের ওভারে। সঙ্গীকে হারানোর পর ওই ওভারে রান আউটে বিদায় নেন মিষ্টিও। তবে জোড়া উইকেটের পরের ওভারেই ছক্কা মারেন স্বর্ণা। এর পরের ওভারে ছক্কা আসে দিলারা আক্তারের ব্যাট থেকেও। চাপ সরে যায় তাই নিমিষেই। এই দুজনের জুটিতেই ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ। ৩৯ রানে থেকে শেষ ওভার শুরু করেন স্বর্ণা। সেই ওভারে দুটি চার ও শেষ বলে দুই নিয়ে তিনি পূর্ণ করেন ফিফটি। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮৬ রান আসে ৫১ বলে। আগের ম্যাচের প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ দিলারা এবার অপরাজিত থাকেন ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৬ রান করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ : ২০ ওভারে ১৬৫/২ (প্রত্যাশা ৫৩, মিষ্টি ১৪, দিলারা ৩৬*, স্বর্ণা ৫০*; শাইনি ৪-০-৪১-০, নেত্রাঞ্জলি ৪-০-৩০-১, সেভান্দি ২-০-২৬-০, ভিদুশিকা ৪-০-২০-০, ভিহাঙ্গা ৪-০-২৮-০, দিসানায়েকে ২-০-২০-০)।

শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ : ২০ ওভারে ১৫৫/৪ (সেনারাত্না ০, নিসানসালা ৩, গুনারাত্নে ৬০*, ভিহাঙ্গা ৫৫, নানায়াকারা ৪, দিসানায়েকে ১২*; মারুফা ৪-০-১৯-২, দিশা ৪-০-৪৪-১, দিপা ৪-০-১৬-০, রিয়া ৩-০-৩৪-০, রাবেয়া ৩-০-১৫-০, মিষ্টি ১-০-৩-০, স্বর্ণা ১-০-১০-০)।

ফল : বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ১০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : আফিয়া প্রত্যাশা।