পৌষের শেষ দিকে তীব্র শীতের পর এসেছে মাঘ মাস। কথায় আছে, ‘মাঘের শীত বাঘের গায়’। অর্থাৎ শীতকে পাত্তা না দেয়া বাঘ-সিংহও মাঘ মাসের শীতে উষ্ণতা খোঁজে। মাঘের শীত থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীদের নিরাপদ রাখতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা সাধারণ সময়ের চেয়ে তদারকি বাড়িয়েছেন। শীতে বেশি আক্রান্ত হয় পাখিরা। তাই তাদের গায়ে যেন হিমেল বাতাস না লাগে সেই ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন নাজমুল হুদা গণমাধ্যমকে বলেন, শীত যেমন মানুষকে জবুথবু করে, তেমনি প্রাণীদেরও করে। যেসব গৃহপালিত প্রাণী প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে না, তারা শীতে বেশি সংবেদনশীল। বাঘ-সিংহ শীতকে পাত্তা দেয় না। জলহস্তীর কথা চিন্তা করতে পারেন, কোন দিক দিয়ে শীত এলো না এলো সেটা তার কাছে কিছুই না। হরিণ এমন একটা প্রাণী, সে শীত বা বর্ষায় শেল্টার নেয় না। সে বর্ষা এনজয় করে। একেক প্রাণীর সহ্যক্ষমতা একেক রকম। সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল হচ্ছে পাখি। আর যেকোনো কমিউনিটির বয়স্ক প্রাণীরা প্রতিকূলতার সঙ্গে কাবু হয়ে যায়। তিনি জানান, পশু-পাখির ইমিউনিটি বুস্টিংয়ের জন্য ভিটামিন ও মিনারেল ডিসেম্বর থেকে দেওয়া হচ্ছে। এটা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই সেলেনিয়াম, মাল্টি-ভিটামিন ইত্যাদি। এছাড়া পর্যবেক্ষণ এখন বেশি হচ্ছে। আগে দুই বার দেখা হতো, এখন তিন বার করে দেখা হয়। জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীদের মধ্যে যারা শীত সহ্য করতে পারে না তাদের জন্য শীতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। বাইরে চট এবং ভেতরে বেডিং হিসেবে খড়কুটো দিয়ে দিয়েছি। দিনের বেলা দর্শনার্থীদের জন্য কিছুটা উন্মুক্ত করা হয়েছে। তারা চলে গেলে সেগুলো আবার নামিয়ে দেয়া হবে। ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার গগন কাটারিয়া জানিয়েছেন, পার্কের প্রত্যেক পশু-পাখির জন্যই আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন- পার্কে রয়েছে তিনটি বাঘ অমন, অর্জুন ও অমর। রয়েছে দুই বাঘিনী গৌরী ও দিয়া। তাদের ঘরে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে রয়েছে থার্মাল মিটার। সিংহদের থাকার জায়গার মেঝে কাঠের তৈরি, সেখানে রয়েছে রুম হিটারের ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, পশুদের জন্য রয়েছে কম্বলের ব্যবস্থাও। এছাড়াও পশু-পাখিদের থাকার জায়গায় খড় এবং বিশেষ ধরনের গাছের ব্যবস্থা রয়েছে। জুলজিক্যাল পার্ক কর্তৃপক্ষ মনে করছে, বিশেষ এই উপায়ের কারণে এখানকার পশু-পাখি এই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। এমনকি শৈত্যপ্রবাহের এই সময়ে তাদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।