আবারো সংকটের মধ্যে জাপা

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দেবর-ভাবির মধ্যে আবারও ঠান্ডা লড়াই শুরু হচ্ছে। দলীয় করণে জিএম কাদের এবং রওশন এরশাদকে একই মঞ্চে দেখা গেলেও পর্দার আড়ালে চলছে ক্ষমতার লড়াই। অন্যদিকে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল থেকে যতটা ছাড় চেয়েছিল জাপা, তা না পাওয়ায় তাদের সপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।

জানা যায়, জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্বের ওপর আদালতের দেয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে জিএম কাদেরের করা আপিল গ্রহণযোগ্যতার আবেদন খারিজ করেছেন আদালত। ফলে তার ওপর বিচারিক আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এ আদেশ দেন।

এদিন জিএম কাদেরের করা আপিলের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুনানি নিয়ে আদালত তা খারিজ করেন। এর ফলে জিএম কাদেরের ওপর বিচারিক আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকছে।

আপিল আবেদন খারিজ হওয়ার আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জাপা চেয়ারম্যানের ওপর আদালতের দেয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন বিষয়ে ৯ জানুয়ারি শুনানি গ্রহণ করেন ঢাকার জেলা জজ আদালত। পরে ১৫ জানুয়ারি আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। তবে সেদিন কোনো আদেশ হয়নি। গত বৃহস্পতিবার আপিল আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে পুনরায় শুনানি গ্রহণ করা হয়।

২০২২ সালের ৪ অক্টোবর জাপার বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধা জিএম কাদের জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে আদালতে মামলা করেন।

বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের দলীয় যাবতীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার অস্থায়ী আদেশ দেন।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এরপর বিবাদি জিএম কাদের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বছর ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন।

২০২২ সালের ৫ মার্চ গাজীপুর মহানগর কমিটির উপদেষ্টা আতাউর রহমান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুর শিকদার, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক রফিকুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মো. আজিজকে বহিষ্কার করেন। এছাড়া ১৪ সেপ্টেম্বর বাদী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেন। অন্যদিকে ১৭ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকেও জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন, যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।

তাই ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের কাউন্সিলসহ চলতি বছর ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করতে এবং হাইকোর্ট বিভাগের রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির পরবর্তী কাউন্সিল স্থগিত রাখতে মামলায় আদেশ চাওয়া হয়।

এদিকে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। গত বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে জাপার সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছিলেন না দলের সব পদ হারানো রাঙ্গা। এরপর তিনি উপনেতা জিএম কাদেরের কক্ষে গিয়ে ক্ষমা চান।

জিএম কাদের বলেন, জাপা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভালো ফল করতে হবে। তিনি বলেন, এককভাবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দল জাপা।

জাপা সূত্র জানায়, রওশনপন্থিরা দলের পদে ফিরবেন। তবে জিএম কাদেরপন্থিদের ঘোর আপত্তি রাঙ্গা ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধাকে নিয়ে। জিয়াউল হকের মামলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞায় দলীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না জিএম কাদের। হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ ঘুরে জেলা জজ আদালত নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন। ফলে রওশনের সঙ্গে সমঝোতা হলেও জিএম কাদের কতদিন নিষেধাজ্ঞায় থাকবেন- তা অনিশ্চিত।

জিএম কাদের বিএনপির সুরে কথা বলছেন, এমন কারণ দেখিয়ে তাকে নেতৃ থেকে সরাতে রওশন গত ৩১ আগস্ট সম্মেলন ডাকলে জাপা ভাঙনের মুখে পড়ে। পাল্টা হিসেবে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ ছাড়া করার চেষ্টা করেন জিএম কাদের। ১ সেপ্টেম্বর দলের ২৬ এমপির ২৪ জনের সমর্থন নিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেন। কিন্তু সপ্তাহখানেক পরই রওশনের পক্ষ নিয়ে সুর বদল করেন স্পিকারকে চিঠি পৌঁছে দেয়া রাঙ্গা।

জাপা সূত্রের খবর, গত আগস্টে থেকে যা হয়েছে সবকিছু ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণে। বিবাদের জড়ানো দুইপক্ষই সরকারের পক্ষে। সরকার রওশনকে একতরফা সমর্থন দেয়নি আবার বছরখানেক ধরে সরকারের সমালোচনায় মুখর জিএম কাদেরকে চাপে রাখলেও ‘বন্ধুত্ব’ ভাঙেনি। সরকারের সমর্থনে রওশন জাপা বিভক্ত করলে, জিএম কাদেরের বিএনপির দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। সে কারণেই দুইপক্ষকেই নিয়ন্ত্রণে রাখে সরকার।