রাজউকের প্লট বরাদ্দে দীর্ঘসূত্রতা

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা

পদে পদে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

রাজধানীর বুকে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের স্বপ্ন নিয়ে জীবনের সঞ্চিত সব অর্থ দিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পেয়ে বিপদে পড়েছেন গ্রাহকরা। বছরের পর বছর পার হলেও প্লট বরাদ্দ ও প্রকল্পের কাজের বাস্তবায়ন ঝুলে আছে।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ৬ হাজার ২২৭ একর জমিতে বাস্তবায়ন শুরু হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০১০ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরপর আরও দুই দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তাও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এরপর ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে একপর্যায়ে ২০২১ সালের জুনে শেষ করার কথা বলা হয়। এ মেয়াদও এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ পুরো প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারি চাকরিজীবী অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান ২০০৪ সালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সাড়ে ৭ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পান। তবে প্লটটি নিজের নামে দলিল করতে গিয়ে দেখেন পূর্বাচলের প্লটটি মো. রফিক নামের এক ব্যক্তির নামের বরাদ্দ দেয়া। প্লটের সকল টাকা পরিশোধ করার পরেও ১৮ বছরেও নিজের বরাদ্দের প্লটটি বুঝে পাননি সহিদুর রহমান। উল্টো বিভিন্ন সময় হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান বলেন, ‘রাজউকের কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারণে হয়রানি হচ্ছি। সাড়ে ৭ কাঠা প্লট পেতে এ পর্যন্ত ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। টাকা পরিশোধের পরেও গত ১৮ বছরেও প্লটটি বুঝে পাইনি। রাজউকের একটি অসাধু চক্র পরিকল্পিতভাবে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। তাই গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কোড নম্বর ১২০২৩, আইডি নম্বর-০২-০৪১০-০১২ প্লটটি লিজ ডিড করার আবেদন করেছি। আমার বিষয় এখনও নিষ্পত্তি করেনি রাজউকের কর্মকর্তারা।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে দ্বৈত বরাদ্দের জটিলতায় একাধিক প্লটের মালিকানা ঝুঁলে আছে। একই প্লট দুই ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে রাজউক থেকে বলা হচ্ছে, এই জটিলতা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একই প্লটের দুজন মালিকানা দাবির পর কর্তৃপক্ষ প্রথম বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকে বৈধ ঘোষণা করছে। তবে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকে হতাশ না করে খালি পাওয়া সাপেক্ষে তাকেও প্লট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে বলে জানান রাজউকের কর্মকর্তারা। কিন্তু কোন প্লট, কবে খালি হবে ও কবে পাওয়া যাবে এর কোনো সঠিক সময় বলতে পারছে না কর্মকর্তারা। তাই রাজউকের এক অসাধু চক্র গ্রাহকদের পদে পদে হয়রানি করছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এ প্রকল্পে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৬ হাজার ২১৩টি আবাসিক প্লট রয়েছে। সব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই প্লট দুই ব্যক্তির নামে গেছে। এটি মূলত এমআইএস শাখা ও পূর্বাচল নতুন শহরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও অনিয়মের কারণে ঘটেছে বলে দাবি করেছে রাজউকের একটি সূত্র। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন আর এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। এমআইএস শাখা তথ্যভাণ্ডার আধুনিক করা হয়েছে। ফলে একই প্লট দুবার বরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের শুরু দিকে অসতর্কতার কারণে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু এখন অনেকটা সহজ হয়েছে। একই প্লট একাধিক ব্যক্তির নামে বরাদ্দ থাকলে তা সমাধান করা হচ্ছে। প্রথম বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তির বরাদ্দপত্র বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর আমাদের হাতে থাকা খালি প্লট পাওয়া সাপেক্ষে অন্যজনকেও বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজউকের এমআইএস (তথ্য যাচাই-বাচাই পদ্ধতি) কিছুটা সমস্যা ছিল তা সমাধান করা হয়েছে।