জাতীয় সংসদে বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০টি। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়। প্রায় এক যুগ আগে সংবিধান সংশোধন করা হলেও এখনও সংশোধন হয়নি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ২০০৪ সালে করা এ-সংক্রান্ত আইনটি। অবশেষে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আজ রোববার কমিশনসভা ডেকেছে ইসি। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কমিশনসভায় জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন, ২০০৪-এর কিছু সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
ইসির উপসচিব মো. আব্দুল হালিম খান বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনসংক্রান্ত আইনটি ২০০৪ সালে করা হয়েছে। এরপর ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী হওয়ায় আসন সংখ্যা কমবেশি হয়েছে। তাই আমরা এখন আইনটি সংবিধানের আলোকে হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি কমিশনসভায় উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, দেশের মূল আইন হচ্ছে সংবিধান। আমরা এর আলোকে কাজ করি। খুঁটিনাটি বিষয় সংশোধন করা হবে। আইনটির কোন কোন জায়গায় হাত দেবেন জানতে চাইলে মো. আব্দুল হালিম খান বলেন, আসলে হাত দেয়ার কিছু নেই। খুব বেশি পরিবর্তন নেই। যেহেতু ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫০টি করা হয়েছে, তাই সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের যে আইন রয়েছে, সেটি হালনাগাদ করা হবে।
এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আগে প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার ছিল। সেটি ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিলসহ ছোটখাটো কিছু সংশোধনী রয়েছে। মূলত সংবিধানের আলোকেই আইনটি হালনাগাদ করা হচ্ছে। আইন কমিশন সভায় অনুমোদন পেলে এটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে ক্যাবিনেট হয়ে সংসদে যাবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত নারী আসন) নির্বাচন আইন, ২০০৪ দিয়ে চলছে কমিশন। অথচ ২০১১ সালের ৩ জুলাই পঞ্চদশ সংশোধনীতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৪৫টি থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়েছে। ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের একমাত্র আইনসভা। ভোটারদের প্রত্যক্ষ রায়ে প্রতি আসন থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রতি পাঁচ বছর পরপর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সংসদে ১৫টি, দ্বিতীয় থেকে সপ্তম সংসদ পর্যন্ত ৩০টি, অষ্টম সংসদে ৪৫টি এবং নবম সংসদ থেকে এখন পর্যন্ত সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে। তবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১১ দিনের সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন ছিল না। ২০০৪ সালের মে মাসে সংসদীয় আসন অধ্যাদেশ (চতুর্দশ সংশোধনী), ২০০৪ পাস করে সংবিধানে নিম্নোক্ত ধারা সংযুক্ত করা হয়। অনুচ্ছেদ ৬৫(৩)-এ বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া দশ বছরকাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাঙ্গিয়া না যাওয়া পর্যন্ত পঁয়তাল্লিশটি আসন কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং সংসদ কর্তৃক পাশকৃত আইনের সাপেক্ষে সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে সংরক্ষিত আসনে মহিলারা নির্বাচিত হইবেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের এই ব্যবস্থা থাকিলেও মহিলারা সাধারণ নির্বাচনেও প্রার্থী হইতে পারিবেন।’
পরে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৪৫ থেকে এই আসন ৫০টি করা হয়। এসব আসনের ভোটার সাধারণ নাগরিকরা নয়। প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটে সংরক্ষিত আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন নারীরা। ফলে দল বা জোট থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তারাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ছয়টি সংসদীয় আসনের বিপরীতে একটি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে।