ফের আসছে পদোন্নতি

বাদপড়াদের কপাল খুলছে

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রশাসনে আবার পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এবার তিন স্তরের পদোন্নতি দেয়ার কাজে মনোযোগী হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে বিভিন্ন সময়ে বাদপড়াদেরই কপাল খুলছে।

গত বছরের নভেম্বরে ২৮০ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার ঠিক একদিন পরেই ১৭৫ জনকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। একই বছরের এপ্রিলে অতিরিক্ত সচিব পদে ৯৪ জন পদোন্নতি পান। তবে ‘সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের যুগ্ম-সচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নেয়া হয়।

বিধিমালা অনুযায়ী, মূল্যায়ন নম্বরের অন্তত ৮৫ নম্বর পেতে হবে। যুগ্ম-সচিব পদে কমপক্ষে তিন বছর চাকরিসহ ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা যুগ্ম-সচিব পদে কমপক্ষে দুই বছরের চাকরিসহ ২২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্? উদ্দিন চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে পদোন্নতির কোনো সম্পর্ক নেই। পদোন্নতির এই মন্ত্রণালয়ের একটি রুটিন কাজ। তবে পদোন্নতি নিয়ম অনুযায়ীই দেয়া হচ্ছে। এখানে বাদপড়া কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার সুযোগ নেই, যাদের যোগ্য মনে হবে, তাদেরই পদোন্নতি দেয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এবারের পদোন্নতিতে আগে বাদপড়াদের বিবেচনা করা হচ্ছে। বিগত সময়ে যারা বাদ পড়েছিলেন, কর্মকর্তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) দেখে পদোন্নতির বিষয় বিচেনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিগত সময়ে কে কী কাজ করেছেন, কোন মন্ত্রীর পিএস বা এপিএস ছিলেন, তা বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। এসএসবি যাদের মনে করছে পদোন্নতি দেয়া প্রয়োজন, তাদেরই দেয়া হচ্ছে।

প্রশাসনের পদোন্নতি সংক্রান্ত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড উপসচিব, যুগ্ম-সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুপারিশ করে। এবারও পদোন্নতি বিবেচনার জন্য প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের কাছ থেকে নামের তালিকা চাওয়ার পর থেকে ‘পদোন্নতি’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে নিয়মিত ব্যাচ হিসাবে ২১তম ও ২৫তম ব্যাচের বাদপড়ারা থাকতে পারেন।

সূত্র জানায়, আগামীকাল থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন রয়েছে। এই সম্মেলনের পরে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়গুলো সামনে আসতে পারে। ফলে জেলা প্রশাসক পদেও শিগগিরই বড় পরিবর্তন আসছে। এরইমধ্যে ডিসি পদে নিয়োগের জন্য যোগ্য কর্মকর্তার তালিকাও (ফিস্ট লিস্ট) প্রস্তুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২৫তম ব্যাচ থেকে ডিসি পদায়নের পথও সুগম হবে। ২১তম ব্যাচের ডিসিদের প্রত্যাহার করে ডিসি পদে নতুন পদায়ন ও প্রয়োজনে রদবদলও করা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে প্রশাসনে জাতীয় নির্বাচনমুখী নতুন রোডম্যাপের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে যুগ্ম-সচিব প্রায় ৮৮৮ জন। প্রশাসনে যুগ্ম-সচিবের নিয়মিত পদ আছে ৫০২টি। নিয়মিত পদের চেয়ে ৩৮৬ জন যুগ্ম-সচিব বেশি। যুগ্ম-সচিব পদে বাদপড়া ২১তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হতে পারে। অতিরিক্ত সচিবের নিয়মিত পদ আছে ২১২টি। এর সঙ্গে সমপর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেষণে (নির্ধারিত পদের বাইরে অন্যান্য দপ্তর বা সংস্থায় নিয়োগ) থাকা পদ আছে আরও ১২৫টির মতো। সব মিলিয়েও অতিরিক্ত সচিবের পদ দাঁড়ায় ৩৩৭টিতে। আর কর্মরত অতিরিক্ত সচিব আছেন প্রায় ৪১৪ জন। অর্থাৎ পদের চেয়ে প্রায় ৭৭ জন অতিরিক্ত সচিব বেশি। তবে গতিশীল প্রশাসনের স্বার্থে কম সময়ের ব্যবধানে পদোন্নতিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে চান না প্রশাসন সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক মহল। পদোন্নতি বঞ্চনা নিয়ে এখনো নানা রকম অভিযোগ থাকলেও গত কয়েক বছরে পদোন্নতি দেয়ার ফলে কর্মকর্তাদের যন্ত্রণা লাঘব হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত একটি পদে এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার পদোন্নতি দেয়া হয় না। অনেক আগে থেকে অলিখিত এই নীতি ফলো করা হয়। যদিও ব্যাচ ধরে পদোন্নতি দেয়ারও কোনো লিখিত নিয়ম নেই। কেউ পদোন্নতিযোগ্য হলেই শূন্যপদ থাকা সাপেক্ষে পদোন্নতি দেয়ার কথা। তবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগের সেই দুর্দিন এখন আর নেই। গত কয়েক বছর থেকে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। প্রতিটি স্তরে পদোন্নতির জন্য অপেক্ষার প্রহরও অনেকটা কমেছে।