ইভিএম প্রকল্প আপাতত হচ্ছে না

রাজনৈতিক ও আর্থিক কারণে ইভিএম থেকে সরে এল ইসি

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক ও আর্থিক কারণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) থেকে সরে আসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে ক্ষেত্রে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইসির হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে ২০ থেকে ৩০ আসনে ভোট করা হতে পারে। বাকি সব আসনে ব্যালটে ভোট হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও সুশিল সমাজ ইভিএমের বিপক্ষে ছিল। এছাড়া বাংলাদেশের নগরিক এ যন্ত্র ব্যবহারের অভ্যস্ত নয়। অনেক নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পর ভোটগ্রহণ করতে হয়েছে। ফলে ইসি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, নতুন করে ইভিএম কেনার প্রকল্প আপাতত হচ্ছে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে সরকার এই প্রকল্প গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইভিএম ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্প বিস্তারিত পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের সামর্থ্য বিবেচনায় আপাতত প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে এটা রান করবে না, পরবর্তী সময়ে হয়তো রান করবে।

প্রকল্প না হলে কতগুলো আসনে ইভিএম হবে এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনের পূর্বের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন তার রোডম্যাপে বলেছিল, যদি নতুন ইভিএম কিনতে পারে তাহলে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে। নতুন ইভিএম না পেলে বিদ্যমান ইভিএমে দিয়ে যত আসনে ভোট করা সম্ভব সেটা করা হবে। এই সিদ্ধান্ত আগেই জানানো হয়েছে। এখনো সেটা বহাল আছে। পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো কমিশন জানিয়ে দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আগেই বলা হয়েছে- আমাদের হাতে যত ইভিএম আছে তা নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে ৫০টা হতে পারে, ৬০টা হতে পারে বা ৭০টা হতে পারে। কোয়ালিটি চেক করে বলতে পারবো বাস্তবে কতটিতে ইভিএম করা যাবে। সচিব জানান, ইসির কাছে দেড় লাখ ইভিএম মেশিন আছে। এরমধ্যে কিছু হয়তো সচল নাও থাকতে পারে। সেগুলোর গুণগত অবস্থা যাচাই করে তা নিয়ে নির্বাচন করা হবে। আর্থিক সক্ষমতা থাকলে ভবিষ্যতে এ প্রকল্প আবার গ্রহণ করা হতে পারে বলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান। তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হবে কী হবে না সেটা কমিশন বলতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমি সরকারের বার্তাটা আপনাদের জানিয়েছি। সরকারের সিদ্ধান্ত কমিশনকে অবহিত করেছি। প্রকল্প না হওয়ায় কমিশন হতাশ কি না জানতে চাইলে সচিব জাহাংগীর বলেন, সেটা কমিশনই বলতে পারবে। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ১৯ অক্টোবর ৮ হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। এক দফা ফেরত আসার পর সংস্কার করে পুনরায়ও পাঠানো হয় প্রস্তাব।

কিন্তু কোনো অগ্রগতি না দেখে নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটি পাস না হলে পরবর্তী কাজগুলো করা সম্ভব হবে না। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সব কিছু মিলিয়েই আমরা বলেছিলাম- মধ্য জানুয়ারির মধ্যে না হলে আমাদের পক্ষে দেড়শ আসনে করা সম্ভব না। কথাটি বলেছি সর্বোচ্চ। আমাদের হাতে যে ইভিএম আছে তা দিয়ে করবো। গত বুধবার পশ্চিমা কূটনীতিকরা সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন, সেখানেও ইভিএমের প্রসঙ্গটি আসে। তখন সিইসি বলেছিলেন, তাদের জানানো হয়েছে, ইভিএম নিয়ে যে অবিশ্বাস ছিল, তা অনেকটা কেটে গিয়েছে। তবে তিনি এটাও জানিয়েছিলেন যে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে এখনো তারা পুরোপুরি নিশ্চিত নন, কারণ আদৌ পর্যাপ্ত ইভিএম পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।