ডিসি সম্মেলন শুরু আজ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোটা বাতিলে প্রস্তাব উঠছে

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

মাঠপর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তদারকি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক। সেজন্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের উদ্দেশে ডিসি সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন হবে। এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিল, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত (এমপিওভুক্তি) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য পৃথক অধিদপ্তরের প্রস্তাব উঠছে ডিসি সম্মেলনে। ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে তিনি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এবারের ডিসি সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের প্রতি সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর মনোভাব প্রদর্শনের নির্দেশনাও থাকছে। এছাড়া গত বছর সরকারের দেয়া নির্দেশনা কতটুকু মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হয়েছে সেটিও তুলে ধরা হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিলে প্রস্তাবটি করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও শিক্ষার মান বাড়াতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিল দরকার। কারণ, পোষ্য কোটা থাকায় চাকরিতে যোগ্য প্রার্থী কখনও কখনও বঞ্ছিত হচ্ছেন। আবার একই পরিবারে তিন থেকে চারজন চাকরি পাচ্ছেন। কোটা বাতিল হলে দুর্বল প্রার্থীর শিক্ষক হওয়া বন্ধ হবে। তবে পোষ্য কোটা বাতিলের প্রস্তবনা বাস্তবায়ন বেশ কঠিন বলে মনে করছেন মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিল চায় অধিকার বঞ্চিত বেকারসমাজ। গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কোটা বাতিল ও শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দাবি করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. তারেক রহমান। গণস্বাক্ষরে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগে এই মুহূর্তে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পারিবারিক বা পোষ্য কোটা, ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা প্রয়োগ করা হয়েছে, যেখানে ২০ শতাংশ বিজ্ঞান কোটাকে সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

কোটার বিরুদ্ধে আদালতে ২০২১ সালের মার্চে রিট পিটিশন করলে দীর্ঘ ৯ মাস পর ১৩ ডিসেম্বর প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিল করতে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। আদালতের বিড়ম্বনা ও গাফিলতির সুযোগে কোটা বহাল রেখেই ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজনীতির বাইরে রাখতে আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ থাকছে। এতে শ্রেণি কার্যক্রমে তাদের দায়সারা আচরণ পরিলক্ষিত হয়। বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার মতো সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করলে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে আন্তরিক হবেন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিলের বিষয়ে ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মুনতাসীর মামুন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর চাকরির ক্ষেত্রে কিছু কোটা রাখা যেতে পারে, এছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে কোটা রাখার প্রয়োজন নেই।’

এবারের ডিসি সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট অফিসকে কাজের সুবধিার্থে ডিসি অফিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় করার প্রস্তাব দিয়েছেন মাগুরার ডিসি মোহাম্মদ আবু নাছের বেগ। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে অধিগ্রহণ বা বরাদ্দ করা জমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে ডিসির অনুমতি নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন গাজীপুরের ডিসি আনিসুর রহমান। জেলায়-উপজেলায় এডিসি ও অ্যাসিল্যান্ডের সরকারি বাড়ি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করেছেন কিশোরগঞ্জের ডিসি আবুল কালাম আজাদ। পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে বিভাগের পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত জমি খাসকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন মাগুরার ডিসি আবু নাছের বেগ। পৌর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর পদ সৃজনের প্রস্তাব করেছেন কুমিল্লার ডিসি মোহাম্মদ শামীম আলম। শিক্ষার্থীদের জন্য সুনির্দিষ্ট শিক্ষা চ্যানেল চালুর প্রস্তাব করেছেন ঝালকাঠির ডিসি। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত ঊর্ধ্বতন অফিস থেকে জারি করা সব ধরনের পত্রের অনুলিপি ডিসি ও ইউএনওকে দিতে প্রস্তাব করেছেন মাদারীপুরের ডিসি রহিমা খাতুন। এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রস্তাব স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সংক্রান্ত, এ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ২৩টি। এরপর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ১৫টি প্রস্তাব ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১৩টি, সুরক্ষা সেবা বিভাগ সংক্রান্ত ১১টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১০টি প্রস্তাব রয়েছে।