ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএনপির ‘নরম’ কর্মসূচিতে তৃণমূলে বাড়ছে হতাশা

কাল মহানগরগুলোয় বিক্ষোভে থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারা
বিএনপির ‘নরম’ কর্মসূচিতে তৃণমূলে বাড়ছে হতাশা

গত বছরের শেষ দিকে বিভাগীয় গণসমাবেশের মাধ্যমে বেশ চাঙ্গা হয়েছিলেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্যদিয়ে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দেখার প্রত্যাশায় ছিলেন তারা। শুধু বিএনপি নয়, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে সরকারি মহলেও বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল। তবে নানা উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশ থেকে সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

এ পর্যন্ত যুগপৎভাবে বিএনপি ও তাদের শরিকরা তিনটি কর্মসূচি পালন করলেও তাতে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি বলে মনে করছেন অনেকে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত-তুলনামূলক ‘নরম’ কর্মসূচি দেয়ার কারণেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এরইমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন অনেকে। এ অবস্থায় চলমান আন্দোলন দীর্ঘ মেয়াদি হলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে বলে তাদের আশঙ্কা। এতে আগামী দিনের সরকার পতন আন্দোলনের সফলতা নিয়ে অনেকটাই হতাশা দেখা দিয়েছে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। এমনকি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মাঝেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের মাঝে হতাশার ছাপ দেখার কথা স্বীকার করে তাদের হতাশ না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন খোদ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই এসব কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিএনপির হাইকমা-। এদিকে ১০ দফা দাবিতে চলমান যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল সারা দেশে জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এ কর্মসূচি সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। মহানগর পর্যায়ের বিক্ষোভগুলোয় নেতৃত্ব দিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও ভাইস-চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে দলটি জানিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক বিবৃতিতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভান্যুধায়ীসহ জনসাধারণের প্রতি কালকের কর্মসূচি সফলের পাশাপাশি ১০ দফা দাবিতে চলমান গণআন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান।

বিএনপির বর্তমান কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে পার্বত্য এলাকার একটি জেলা কমিটির একজন নেতা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবসময়ই চাঙ্গা থাকেন। বিভিন্ন কর্মসূচি সফলের মধ্যদিয়ে তার প্রমাণ দিয়েছেন তারা। তবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এখনো তেমন সুসংগঠিত নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। যে কারণে তৃণমূলের সুফল ঘরে তুলতে পারছে না কেন্দ্র। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া দরকার এবং তা সফল করার বিষয়ে যে গবেষণা দরকার তা নেই। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে রাজনীতিবিদরা রাজনীতিবিদই ছিলেন। আর এখন রাজনীতিবিদরা মূলত ব্যবসায়ী বা অন্য পেজাজীবী। যে কারণে দলীয় রাজনৈতিক সফলতার বিষয়টি তাদের কাছে প্রাধান্য পায় না। এছাড়া পদ মর্যাদার বাইরে গিয়ে বিএনপি নেতাদের বেফাঁস কথাবার্তা বলার কারণেও দলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে এবং ‘বল’ সরকারের কোর্টে পাঠানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূলের ওই নেতা।

এদিকে বিএনপির চলমান যুগপৎ আন্দোলনের শরিক নেতাদেরও অনেকে বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনের কোনো রোডম্যাপ সম্পর্কে তাদের অজানা। যুগপৎ আন্দোলনের যে ধরনের সমন্বয় দরকার তাও ঠিক মতো হচ্ছে না। তাছাড়া পুরোনো শরিক জামায়াতকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণে সরকার পতন আন্দোলনের সফলতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বলে তারা মনে করেন। তবে ১৪ বছর ধরে সরকার পতনের আন্দোলনে সাফল্য না এলেও নেতাকর্মীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার তিনি বলেছেন, অনেকের কথায় আমি হতাশার একটু ছাপ খুঁজে পাই। কেন হতাশ হবেন? আমরা তো সাকসেসফুল হচ্ছি, প্রতিটা স্টেপে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি জেলে গেছি, আমি একা জেলে যাইনি তো। হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে গেছেন। তাদের মুখে আমি এতটুকু হতাশার ছাপ দেখিনি। কারণ এই লড়াইটা শুধু আমার লড়াই নয়, এই লড়াইটা আমার দেশের লড়াই, এই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার, শুধু আমার জন্য নয়, সমগ্র মানুষের জন্য জাতির জন্য।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি আসলে এক ‘অসম লড়াইয়ের’ মধ্যে আছে। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা, তারা প্রবল প্রতাপশালী, ক্ষমতাশালী। তাদের হাতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, তাদের হাতে বন্দুক, তাদের হাতে পিস্তল-গ্রেনেড। অবলীলাক্রমে তারা সেগুলো মারে, উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা জিনিসের উত্থান-পতন আছে, সামনে আগানো, পেছানো যাওয়া, সেই টেউয়ের মত। যে টেউ শুরু হয়েছে উত্তাল তরঙ্গের মত, সমুদ্রের মত, এরা ভেসে যাবে। কারণ এদের সাথে জনগণ নাই, জনগণ থাকবে না। আমাদের শেষ কথা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে ১০ দফা দিয়েছি, সেই ১০ দফার প্রথমেই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সরকার অবৈধ সরকার। সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে, সেই সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা জয়ী হব।

কাল মহানগরগুলোতে সমাবেশের নেতৃত্বে থাকবেন যারা : যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি ও সমমনারা। এসব সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল জানান, রাজধানী ঢাকায় নয়াপল্টন সড়কে সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথি থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও বেগম সেলিমা রহমান।

এছাড়া বরিশালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহীতে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গাজীপুরে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কুমিল্লায় মো. শাহজাহান, সিলেটে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ময়মনসিংহে শামসুজ্জামান দুদু, রংপুরে অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ফরিদপুরে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, খুলনায় নিতাই রায় চৌধুরী এবং নারায়ণগঞ্জে যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমগ্র কর্মসূচি সমন্বয় করবেন এবং সুবিধামতো ইউনিটের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত