ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনেই শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রভাব কমে আসায় পর এবার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ উপলক্ষ্যে চলছে ব্যস্ত সময়। এরই মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রস্তুতির কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে একাডেমি সূত্র জানিয়েছে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এরই মধ্যে মেলার প্রস্তুতি কাজ সরেজমিন দেখার জন্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেছেন।

এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘পড় বই গড় দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বশরীরে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

বাংলা একাডেমির প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক এবং অমর একুশে বইমেলার সদস্য সচিব কেএম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে অমর একুশে বইমেলার জন্য প্রত্যেক সেক্টর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবারো একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদাকে সভাপতি করে ৩১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নানা বিষয়ে আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির মূল কাজ অমর একুশে বইমেলা কার্যক্রম পরিচালনা করা নয়। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমি তো বাইরের প্রকাশনার দায়িত্ব নিতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা বইমেলায় আসছে, সবকিছু মনিটর করা একাডেমির পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। সরকারি কোনো সেল থাকলে এবং সরকারিভাবে যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তাহলে ভালো হয়।

তিনি বলেন, মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে গত ১৯ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, বইমেলার প্রথম দিন থেকেই টাস্কফোর্স যেন সঠিকভাবে বিষয়গুলো মনিটরিং করে। বাংলাদেশ শিল্পীকল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসীম কুমার দে’কে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি কপিরাইট আইন ও বইমেলা নীতিমালার প্রতিপালন পর্যবেক্ষণ এবং কপিরাইট আইন ও বইমেলা নীতিমালা লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এবার বইমেলায় কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে সদস্যসচিব বলেন, মেলার পুরো বিন্যাসই পরিবর্তন করা হয়েছে। মেলায় মূল মঞ্চ থাকবে বাংলা একাডেমি অংশে। আর গ্রন্থ উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চ থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে। বেশি স্টল ও প্যাভেলিয়ন থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

অন্যদিকে মেট্রারেলের কারণে বিগত সময়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট সংলগ্ন যে ১৮২টি স্টল ও ১১টি প্যাভেলিয়ন ছিল, তা এবার সরিয়ে এনে সোহরাওয়ার্দীর মূল কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। আর সেই স্থানে ফুডকোর্টসহ নানা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আগে যেখানে মেলার প্রধান প্রবেশপথ ছিল তা পরিবর্তন করা হয়েছে। আগেকার সেই প্রবেশ ফটক এবার প্রস্থানের জন্য রাখা হয়েছে। মূল প্রবেশদ্বার রাখা হয়েছে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকে। মন্দিরের প্রবেশদ্বার দিয়ে আগতরা মেলায় প্রবেশ করবে। এবার মেলায় আগতদের জন্য নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পেতে ডিজিটাল বোর্ডসহ প্ল্যাকার্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে ম্যাপ থাকবে এবং বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। এরই মধ্যে অমর একুশে বইমেলা-সংক্রান্ত নীতিমালা একাডেমির ওয়েবসাইটেও দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এবারের মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকছে। এর মধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান, শিশু চত্বর ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভেলিয়ন আছে ৩৪টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং সর্বমোট ৭০৪টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল থাকছে। এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা বুহ্য।

মূল গেট থেকে ঢুকেই শিশু চত্বর পাওয়া যাবে। সেখানে সিসিমপুরসহ শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন থাকবে। মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে। ৯টায় আলো নিভিয়ে দেয়া হবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য গোলাম কুদ্দুস জানান, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। এটি বাঙালির জাতিসত্ত্বার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং প্রতি বছরই বাংলা একাডেমির বইমেলা দর্শক, পাঠক এবং প্রকাশকের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে, যার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে অমর একুশে বইমেলাকে বাংলা একাডেমির চত্বরের বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত কয়েক বছর আগে সম্প্রসারিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা সংকট কাটিয়ে মানুষ আবার বইমেলামুখী হয়েছে। সেভাবেই এবারের বইমেলার আয়োজন চলছে। বিশ্বাস করি, নতুন পাঠক ক্রেতা এবং প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে এবং বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে একটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি ও প্রকাশনা সংস্থা পুঁথি নিলয়ের স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল জানান, এবারের বইমেলায় লটারির মাধ্যমে প্যাভেলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকাশকদের জন্য বইমেলা আয়ের উৎস। আশা রাখছি এবারের বইমেলা জমবে। তবে, কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে এবারের বইয়ের দাম কিছুটা বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত