আওয়ামী লীগ মাঠে নামলে বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না

বললেন ওবায়দুল কাদের

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখনো খেলা শুরু করেনি, সূচনা করেছে মাত্র। আওয়ামী লীগ মাঠে নামলে বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিএনপির ১০ দফা দাবি ও ৫৪ দলের জোট ভুয়া। জনগণ তাদেরকে বিশ্বাস করে না।

গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রেীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক ‘গণঅভ্যুত্থান দিবসে’র আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলনে জনগণ নেই। বিএনপি আন্দোলনে কেবল তাদের নেতাকর্মী রয়েছে, সেখানে জনগণের সমর্থন নেই। আমরা তো শুধু মহড়া দিচ্ছি মাত্র। মাত্র সূচনা করেছি, খেলা এখনো শুরু করিনি। মাঠে নামলে বিএনপি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আব্দুল জলিলের ট্রার্ম কার্ডের ফলাফলের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, জলিল ভাইয়ের ট্রাম কার্ডের পর ফখরুল ইসলামের লাল কার্ড ফলাফল শূন্য লাল কার্ড ভুয়া। ট্রাম কার্ডের ফলাফল কী হয়েছিল আপনারা সবাই জানেন। মির্জা ফখরুল লাল কার্ড দেখাতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরেছেন। আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ নাকচ করে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে না। এটা গণঅভ্যুত্থানের কর্মসূচি। বিএনপি এসব দিবস পালন করে না। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে বিএনপির কেন অন্তর জ্বালা? বিএনপির হাঁকডাক, লোটা-কম্বল, মশার কয়েল, ৭ দিন আগ থেকে সমাবেশের প্রস্তুতি নিলেও সবই ব্যর্থ।

সেতুনমন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে পথ হারা পথিক। তাদের আন্দোলনের ঢেউ এসেছিল। এখন জোয়ার থেকে ভাটা নেমে গেছে। বিএনপি সোহরাওয়ার্দীতে আন্দোলন না করে গরুর হাটে আন্দোলন করেছে। বিএনপির আন্দোলন জোয়ার থেকে ভাটার দিকে যাচ্ছে। বিএনপি বাকশাল নিয়ে কথা বলে। অথচ এটা জাতীয় দল, এদলে আসার জন্য জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে দরখাস্ত করেছিল। এটার প্রমাণ আছে। দেশের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি, আন্দোলন সংগ্রাম আর লড়াইয়ের মাধ্যমে এসেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছর সংগ্রাম করে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আওয়ামী লীগ এখনো মাঠে নামে নাই, কেবল মহড়া দিচ্ছে মাত্র তাতেই বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ মাঠে নামলে বিএনপির কি হবে? গণঅভ্যুত্থান করতে মানুষ লাগে। কিন্তু বিএনপির সাথে কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। রাজপথে সন্ত্রাস আর নৈরাজ্য করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে থেকে কঠোর জবাব দেবে আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয়ের জন্য বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে। যারা বলে স্বাধীনতা এমনিই আসছে, তাদের উদ্দেশ্য বলি- স্বাধীনতা এমননি আসেনি, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে এসেছে। আর জিয়াউর রহমান হলো আপনা-আপনি মুক্তিযোদ্ধা।

আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করতে চায়। তারা নির্বাচন মানে না আদালত মানে না। দেশে কোনো অবস্থায়ই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। বিএনপিকে দিয়ে দেশে গণঅভ্যুত্থান সম্ভব না। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেই ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে বিএনপি।

ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে আগামী নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আবারও ষড়যন্ত্র করছে কারণ তারা জানে এ নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। জঙ্গিবাদ, খুন, অত্যাচারসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল বিএনপির। তাই জনবিচ্ছিন্ন কাজের জন্যই জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে এসেছে। কারো বাঁশির ফু’র মাধ্যমে আসেনি। ১৯৪৯ সালের আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের কাজ করে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুকে হামলা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল পাকিস্তান কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে থামাতে পারেনি। বাঙালির অধিকার আদায়ের ইতিহাস রচনা করেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জেল অত্যাচার কম ভোগ করেনি।

হানিফ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সন্দিহান তারা এদেশের শত্রু, যারা এখানো সংবিধান সমালোচনা করে তারা পাকিস্তানের দোসর, যারা এখনো বলে স্বাধীনতা আপনা আপনি আসত এরা এদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না। স্বাধীনতা হঠাৎ করে আসেনি। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার এসেছে।

আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, আবার শেখ হাসিনাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন বন্ধ করতে ষড়যন্ত্র করছে। খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তার ছেলে তারেক জিয়া হাওয়া ভবন তৈরি করে লুটপাট করেছিল।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ডে দ্রুত কমিটি করারও নির্দেশ দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা।

এদিন বিকালে রাজধানীর বনানী মডেল স্কুল মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেন, সংবিধানের বাইরে তত্ত্বাবধায়কের নামে কোনো অস্বাভাবিক সরকার আওয়ামী লীগ মানে না, মানবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন যথাসময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। নাকে খত দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসে কি না, তা দেখার অপেক্ষায় আছি।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগ সংগঠিত, কিন্তু আমরা নেত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এ বীরের দেশে বিশ্বাসঘাতকের অভাব নেই। আজকে বিএনপি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে। বিশ্বাসঘাতকদের যোগসাজশ না থাকলে তারা কোনো দিন সফল হবে না, হতে পারে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল বাকশালের বিরুদ্ধে কথা বলে। কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ-বাকশাল সব দল ও মত নিয়ে গঠিত জাতীয় দল। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে দরখাস্ত করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন। কৃষক, শ্রমিককে ঘৃণা করে বিএনপি। সার ও মজুরির দাবিতে আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছে বিএনপি। জনগণ ছাড়া গণ-আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নেই। বাংলাদেশেও অবাস্তব উচ্চারণ করে লাভ নেই।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচিসহ মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা।