আজ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

এবার পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মেট্রোরেলের পর এবার পাতাল রেলের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশের প্রথম পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন। এই প্রকল্প থেকে দুটো রেললাইন নির্মাণ করা হবে। একটি লাইন হযরত শাহজাহাল (রহ.) বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ। এটি মাটির নিচ দিয়ে যাবে। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার রেললাইন উড়ালপথে যাবে।

ঢাকা শহরের মানুষের চলাচলের জন্য দেশের প্রথম পাতাল রেলের ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চিতলগঞ্জে। ওই ডিপোর নির্মাণ কাজের মাধ্যমে প্রকল্পের উদ্বোধন কাজের সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের এই প্রকল্পটি ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট লাইন-১ বা এমআরটি লাইন-১ নামে পরিচিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দুটো লাইন থাকবে। হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে মাটির নিচ দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এই পাতাল পথে রেলের স্টেশন থাকবে ১২টি। স্টেশনগুলোর নির্ধারিত জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এবং বিমানবন্দর। আর এমআরটি লাইন-১ এর অপর অংশ নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়ালপথে। স্টেশন থাকবে ৭টি। সেগুলোর নির্ধারিত জায়গা হলো- জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্ট্রাল, পূর্বাচল পূর্ব এবং পূর্বাচল টার্মিনাল। এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ১২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এই রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২৪ দশমিক ৩০ মিনিট। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে ২০ দশমিক ৩৫ মিনিট। এমআরটি লাইন-১ এর প্রতিটি পাতাল স্টেশন হবে তিনতলা। টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে প্রথম বেজমেন্টে। প্ল্যাটফরম থাকবে দ্বিতীয় বেজমেন্টে। আর উড়াল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এবং প্ল্যাটফরম থাকবে তিনতলায়। যাত্রীদের চলাচলের জন্য উড়াল ও পাতাল-দুই পথের স্টেশনেই থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর সুবিধা। স্টেশনগুলোয় পর্যাপ্ত বাতাস ও অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক রাখতে থাকবে অতিরিক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেলের লাইন-১-এর ডিপো নির্মাণ হবে নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে। এই কাজের জন্য জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। পুরো প্রকল্পের কাজ ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে প্যাকেজে সিপি-১-এর আওতায় ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।

দেশের প্রথম মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬-এর একাংশ ২৮ ডিসেম্বর চালু হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলাচল করছে। এমআরটি-৬ দেশের প্রথম মেট্রোরেল এবং এমআরটি-১ দেশের প্রথম পাতাল রেল। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ৬টি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকায় ১৩০ কিলোমিটার শক্তিশালী মেট্রো নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় সরকার। তখন মেট্রো নেটওয়ার্কে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে।