রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা কাল

স্মরণকালের জনসমাগমের প্রস্তুতি

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

বছর শেষ হলেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনী বছরের প্রাক্কালে রাজশাহীতে প্রথম জনসভা করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামীকাল রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। রাজশাহীর জনসভায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়া সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও এ জনসভা সফল করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বিগত টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জন্য যেসব উন্নয়ন করেছে তা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন তিনি। একই সঙ্গে ক্ষমতায় আসার আগে কী পরিস্থিতি ছিল সেগুলোও জনগণকে মনে করিয়ে দেবেন। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে জনগণের কাছে আবারও নৌকায় ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীদের বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব দেবেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামীকালের জনসভা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাজশাহীর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। মাদরাসা ময়দান ছাড়িয়ে মূল সড়ক ও মহাসড়কে জনগণ বিস্তৃত হবে। এ জনসভায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত আমলে রাজশাহীর পরিস্থিতি কী ছিল তাও জনগণকে মনে করিয়ে দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর প্রতিটি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।

জনপ্লাবন নামবে রাজশাহীতে : স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছর পর রাজশাহীর জনসভায় বক্তব্য দিবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর জনসভা সফল করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ জনসভায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতিটি ইউনিট। ইতোমধ্যে রাজশাহীর মাদরাসা মাঠ নতুনরূপে সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। বিশাল মাঠে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা তৃণমূলে জনসংযোগ করছেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। জেলা-উপজেলায় গণসংযোগ, কর্মিসভা করে বেড়াচ্ছেন সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী যাবেন। সেজন্য আমরা জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথসভা করছি, প্রস্তুতি জনসভা হিসেবে। এরপর আশপাশের জেলা-উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়েও আমরা প্রস্তুতি সভা করেছি, প্রতিনিধি সভা করেছি তাদের নিয়ে বসেছি। মানুষেরও মধ্যেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে, একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হবে রাজশাহীতে। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর আগমনের দিন রাজশাহী শহরে তিল পরিমাণ জায়গা খালি থাকবে না। সেদিন পুরো রাজশাহী হবে জনগণের শহর। রাজশাহীবাসী তাদের প্রিয় নেত্রীকে এক নজর দেখার জন্য আসবে।

প্রধানমনমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কল্যাণে যে কাজগুলো করেছেন, এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করতে তৃণমূলের মানুষ ছুটে আসবেন রাজশাহী শহরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন কেন্দ্র করে পুরো রাজশাহী শহর জনসমুদ্রে পরিণত হবে। আমরা শুধু মানুষকে সুসংগঠিত করছি। তিনি আরও বলেন, রাজশাহী বিভাগের মানুষের মাঝে একটা জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। সাড়ে ৫ বছর পর তাদের প্রিয় নেত্রী রাজশাহীতে আসছেন। নেত্রীর প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে, এটা প্রকাশ করতেই তারা ছুটে আসবেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, তারা এদেশের মানুষের জন্য কিছু করেনি। বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে, মিথ্যা কথা বলে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তারা মানুষের ভোট নিয়েছিল। রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ দেখেছে, তারা বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে। বাংলাভাই অস্ত্র উচিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছে, রাজশাহী জেলা বাংলাভাইয়ের কাছে জিম্মি ছিল। মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, কৃষকের সার ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। শিক্ষার নগরী রাজশাহী খুনের নগরীতে পরিণত হয়েছিল। সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছিল, মানুষ এগুলো ভুলেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এগুলোর আমূল পরিবর্তন হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, রাজশাহীও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহীতে প্রচুর অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে, মানুষ শান্তিতে আছে, নিরাপদে আছে। রাজশাহীর জনগণ মনে করেন, যে নেত্রী তাদের শান্তিতে রেখেছে, জান ও মালের নিরাপত্তা দিয়েছেন, সেই নেত্রীকেই তারা দেখতে আসবেন।

রাজশাহী জামায়াত অধ্যাষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত সেখানে প্রত্যাশিত উপস্থিত হবে কি না? জানতে চাইলে এসএম কামাল হোসেন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, রাজশাহী জামায়াত অধ্যাষিত এলাকা এ কথাটা হচ্ছে একটা মিথ্যাচার। রাজশাহীর জনসাধারণের মনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। রাজশাহীর জনগণ শেখ হাসিনা, নৌকা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে। রাজশাহী জামায়াত-বিএনপির অধ্যুষিত এলাকা বলা হয়, একথা সঠিক নয়। ৭০ এর নির্বাচনে রাজশাহীর জনগণ তো আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, গুজব, মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করেছিল। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষ দেখেছে, নৌকায় ভোট দিলে মানুষ প্রতারিত হয় না, বঞ্চিত হয় না। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা যে কথা বলেছেন, সে কাজগুলো করেছেন। তিনি আরও বলেন, ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত মানুষ বিএনপি-জামায়াতে দুঃশাসন ও অপকর্ম দেখছে। ২০০৮ সালেও মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে, তখনও আমরা অধিকাংশ আসনে জয় পেয়েছি। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছে, বয়স্ক ভাতা দিচ্ছে, বিধবা ভাতা পাতা দিচ্ছে, প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা নতুন-নতুন বই পাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগে বিভিন্ন জেলায় গৃহহীন মানুষকে আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর করে দিয়েছেন। রাজশাহী শহর অধিকার শহরে পরিণত হয়েছে। রাজশাহীর মানুষ শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করছেন। রাজশাহীতে যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন, তারা যদি মানুষের কাছে বিনয়ী হন আর আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা, রাজশাহীবাসীর জন্য তিনি যে সকল উন্নয়ন করেছেন, সে বিষয়গুলো যদি মানুষের সামনে তুলে ধরেন এবং বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের চিত্র বিনয়ের সঙ্গে তুলে ধরলে আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।