আঁচল ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলন

এক বছরে ৪৪৬ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা : শীর্ষে ঢাকা

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

গেল বছর সারা দেশে ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে বলে জানায় সংগঠনটি। গতকাল অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে জানায় তারা। সংবাদ সম্মেলনে, আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন। আগের জরিপের সূত্র দিয়ে তিনি বলেন, স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, সবস্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই আত্মহত্যা সংক্রামক হারে বেড়ে চলছে। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আঁচল ফাউন্ডেশন। তারুণ্যভিত্তিক এই সংগঠনটি ২০২২ সালে আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা খুঁজতে গিয়ে দেখতে পায়, সারাদেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আত্মহত্যা করেছে ৮৬ জন শিক্ষার্থী।

দেশের পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে সর্বমোট স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪৬ জন। এর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ে ১০৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এদের মাঝে শুধু মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। এরমধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২৮৫ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬১ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আট বিভাগের মধ্যে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, ২০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগে যা ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। এছাড়াও খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।

পরিসংখ্যান বলেছে, নারীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ রয়েছেন ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থীর পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ। শুধু কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে । আত্মহত্যার পেছনের কারণ হিসেবে মান-অভিমানকে দেখানো হয়েছে। জরিপে উঠে আসা এমনই বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান করেছে পরিবারের সদস্যদের ওপর। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত কারণ, পারিবারিক কলহসহ নানা কারণ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম ও মনোবিজ্ঞানী শাহরিনা ফেরদৌস প্রমুখ।