ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

একাদশে এখনো ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী

একাদশে এখনো ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে ৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী

চলতি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে তিনধাপে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে। অথচ গত বছর এসএসসি পাস করা ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এখনো ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে। আর সারা দেশের কলেজ-মাদ্রাসাগুলোয় ১২ লাখের বেশি আসন খালি আছে। এ অবস্থায় চতুর্থ ধাপে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে বলে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কলেজ-মাদ্রাসার বহুসংখ্যক আসন ফাঁকা থাকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও অনেকের ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নামি কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীদের চাপ থাকলেও মফস্বলের বেসরকারি এবং তুলনামূলক কম মানসম্মত কলেজের আসন বেশি খালি থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এসএসসি পাস করা এসব শিক্ষার্থীদের ভালো কলেজে ভর্তির প্রতিযোগিতার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকের অভিমত। এদিকে রাজধানীসহ বড় শহরের নামকরা কলেজের চাপ কমাতে মফস্বল শহরের সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক ও অবকাঠামো বৃদ্ধিসহ শিক্ষার মান বাড়ানোর দিকে জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে মফস্বল শহরে মানসম্মত কিছু কলেজ প্রতিষ্ঠারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের উচ্চমাধ্যমিক পাঠদান করা ৭ হাজার ৭০৬টি কলেজ ও মাদরাসায় একাদশে মোট আসন সংখ্যা ২৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৩টি। গত বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ লাখ ৬২ হাজার। কিন্তু একাদশের আসন অনুযায়ী ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ১৬৬ জন। সেই হিসেবে সারা দেশের কলেজগুলোতে ১২ লাখ ৫৩ হাজারের বেশি আসন খালি থাকছে, যা মোট আসনের ৪৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশি হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর। শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়নের সুযোগ ছিল ১-৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ চলছিল ৯-১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল ও দ্বতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশিত হয় ১২ জানুয়ারি। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন হয়েছিল ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি। তৃতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণের সুযোগ ছিল ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল ও তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ ১৮ জানুয়ারি। তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়নের সুযোগ ছিল ১৯ ও ২০ জানুয়ারি। ভর্তিপ্রক্রিয়া ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। এরপর ক্লাস শুরু হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আবু তালেব বলেন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির তিন ধাপে সারাদেশে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আবেদন করেও বেশকিছু শিক্ষার্থী কলেজ পায়নি ও কলেজ পেয়েও কেউ কেউ ভর্তি হয়নি তার সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। সূত্র মতে, কলেজে ভর্তির আবেদন করেও নির্বাচিত হতে পারেননি ২২ হাজার ৬০৪ জন শিক্ষার্থী। নির্বাচিত হতে না পারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই হাজার ৮৪২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, কলেজ নির্বাচনে কৌশলী না হওয়ার কারণেই অনেক আসন ফাঁকা এবং একই সাথে অনেকে আবার ভর্তির সুযোগই পায়নি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবাই সেরা কলেজে পড়তে চায়। কিন্তু শিক্ষার্থী নিজবাড়ি বা আশপাশের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন না করে ঢালাওভাবে বড় বড় কলেজে আবেদন করেছেন। তিনি আরও বলেন, নাম দেখে কলেজে ভর্তির আবেদন করায় অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাননি। তবে তারা চতুর্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ পাবেন। ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনলাইনে চতুর্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ দেয়া হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমরা কলেজগুলো থেকে তথ্য নেবো কোথায় কত সিট খালি আছে। সেই পরিপেক্ষিতে একটি তালিকা প্রকাশ করা হবে।

বিভিন্ন কলেজে আসন খালি থাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি কলেজের একজন সিনিয়র শিক্ষক ড. মো. ওয়ালীউল্লাহ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, মূলত ভালো কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। মফস্বলের কলেজ, বিশেষ করে বেসরকারি অধিকাংশ কলেজে আসন ফাঁকা থাকে। অথচ বাস্তবে মফস্বলের কলেজগুলোতেই ভালো পড়ালেখা করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই শিক্ষাবিশেষজ্ঞ আরও বলেন, রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার নামি কলেজগুলোতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত তথা মেধাবি শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হয়। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকার কারণে শিক্ষকরার ক্লাসে ঠিকমতো পড়াতে সক্ষম হন না। শিক্ষার্থীদেরও মনোযোগ নষ্ট হয়। সে কারণে এসব কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরবর্তী পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়। অন্যদিকে মফস্বলের কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোগত সমস্যা সহ নানা সংকট রয়েছে। এসব কলেজে তুলনামূলক কম মেধাবিরা ভর্তি হয়। তারপরও পরীক্ষায় তাদের ফলাফল তুলনামূলক ভালো। ভালো কলেজে ভর্তির প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক খরচের পাশাপাশি ভোগান্তিও হয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই স্থানীয় পর্যায়ের কলেজগুলোতে শিক্ষার মান বৃদ্ধির দিকে জোর দেয়া জরুরি বলেও তাদের অভিমত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত