ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মাদ্রাসা মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আজ

উন্নয়নের বার্তায় উজ্জীবিত রাজশাহীবাসী

উন্নয়নের বার্তায় উজ্জীবিত রাজশাহীবাসী

সাড়ে ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা রাজশাহী যাচ্ছেন আজ। রাজশাহীতে দিনব্যাপী সফরে প্রায় ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি। এছাড়া আনুমানিক ৩৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এসব উন্নয়নের বার্তায় উজ্জীবিত রাজশাহীবাসী।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। প্রায় ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর সিঅ্যান্ডবি ক্রসিংয়ে দেশের বৃহত্তম ম্যুরালটি নির্মাণ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ম্যুরালটির উচ্চতা ৫৮ ফুট এবং ম্যুরালের মূল অংশে ৫০ ফুট উঁচু এবং ৪০ ফুট চওড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। সীমানা প্রাচীরের উভয় পাশে ৭০০ ফুট জায়গায় টেরাকোটার কাজ করা হয়েছে। গ্যালারি এবং ল্যান্ডস্কেপিং সুপার গ্রানাইট দিয়ে সুসজ্জিত। ম্যুরালে নাইট ভিশনসহ সুসজ্জিত বৈদ্যুতিক বাতি রয়েছে। রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ম্যুরালটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ তাঁর জীবন, কর্ম এবং দেশের স্বাধীনতায় প্রশংসনীয় অবদান ও ত্যাগ সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করে। এছাড়া সিটি করপোরেশন আরও যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সেগুলো হচ্ছে; শেখ রাসেল শিশুপার্ক, মোহনপুর রেল ক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার, চার লেনের সড়ক এবং ভাদ্রা রেল ক্রসিং থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ধীরগতির যানবাহনের জন্য একটি পৃথক লেনসহ রোড ডিভাইডার, চার লেনের সড়ক এবং রোড ডিভাইডার। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে সিটির হাট পর্যন্ত ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন এবং সড়ক প্রশস্তকরণ, কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারি ক্রসিং এবং কার্পেটিং সড়কের উন্নয়ন, হাইটেক পার্ক হয়ে রেন্টুর খারির আড়ত থেকে ধলুর মোড় পর্যন্ত নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ এবং কার্পেটিং। কোর্ট থেকে শাহারতলী ক্লাব পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ।

এছাড়াও মানুষের বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে রাজশাহী নগরীতে শেখ রাসেল শিশুপার্কের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। আরসিসির উদ্যোগে ছোট বনগ্রাম এলাকায় ২ দশমিক ১৪ একর জমির ওপর পার্কটি নির্মাণ করা হয়, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রায় ১১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পুঠিয়া থেকে বাগমারা পর্যন্ত একটি মহাসড়ক নির্মাণ করেছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) প্রায় ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠতলা থেকে দশম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে। প্রায় ২০ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ করেছে। লক্ষ্মীপুর এলাকায় প্রায় ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মোহনপুর উপজেলায় ২২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ২২ কোটি ৯০ লাখ টাকায় রাজশাহী শিশু হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহীতে একটি বহুতল সমাজসেবা ভবন নির্মিত হয়েছে। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে প্রায় ৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়তলার ওপর দোতলা মহিলা হোস্টেল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চারঘাট উপজেলায় ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচতলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী সিভিল সার্জনের অফিস নির্মাণ করা হয়েছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মার ভাঙন থেকে বাম তীর রক্ষায় ৬৯৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) গ্রামীণ সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি সড়ক নির্মাণ করছে। রাজশাহী পিটিআইতে প্রায় ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন।

অন্যদিকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রকল্পগুলো হচ্ছে : ২৪ কোটি টাকায় তথ্য কমপ্লেক্স ভবন, ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় আঞ্চলিক জনপ্রশাসন অফিস ভবন, ৬২ কোটি টাকায় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ১৬২ কোটি টাকায় বিকেএসপি’র আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ। আজ বিকালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে দলীয় জনসভায় বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে একমাস ধরে নানা প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে রাজশাহী সাজানো হয়েছে বর্ণিল রূপে। সবখানে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ফেস্টুন। অবশ্য এসব ব্যানারে সরকারের উন্নয়ন চিত্র বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে চলে ব্যাপক প্রচারণা।

জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীর জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে টানা একমাস ধরে রাজশাহী নগরী ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা-উপজেলা, গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর আগমনী বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নেতারা নিরলসভাবে কাজ করেন জনসভা সফলের লক্ষ্যে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, রাজশাহীতে এবারের জনসভা হবে সর্বকালের মহাজনসমুদ্র। এই সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে পুরো রাজশাহী। র‍্যাব, পুলিশ ও সব গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুরো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নগরীজুড়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই সমাবেশস্থল মাদ্রাসা মাঠে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল জানান, সমাবেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে দলের পক্ষ থেকে ৫০০ স্বেচ্ছাসেবী সেবা দেবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত