ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ

ফখরুল দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা করছিল : সিটিটিসি

ফখরুল দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা করছিল : সিটিটিসি

আফগানিস্তান থেকে ফিরে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) হাল ধরেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশিক্ষিত জঙ্গি ফখরুল ইসলাম। আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণকালে তার সঙ্গে আলোচিত আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে তার একাধিকবার দেখা হয়েছিল বলেও জানা গেছে। ফখরুল ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি যান। সেখানে মুফতি জাকির নামে একজনের মাধ্যমে আল কায়েদার সদস্য হন। এরপর অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগানিস্তান ও ইরান থেকে আবারও পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে ফিরেছেন অত্যাধুনিক একাধিক অস্ত্র চালনায় পারদর্শী ফখরুল। তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র- একে ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চারসহ বিভিন্ন অস্ত্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা।

১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে ফিরে জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে থাকেন দুই যুগের অধিক সময়। ২০০৫ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর জামিন পেয়ে পলাতক ছিলেন। তবে দীর্ঘসময় পরে হলেও গোয়েন্দাদের জালে ফের ধরা পড়ে এ আন্তর্জাতিক মানের জঙ্গি।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন- গত শুক্রবার ঢাকা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এ সময় ফখরুল ছাড়াও হুজির আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ জঙ্গিবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থাটি। গ্রেপ্তার হুজি সদস্যরা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সুরুজ্জামান, হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. দীন ইসলাম এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিটিটিসি প্রধান জানান, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। গ্রেপ্তাররা তাদের অন্য সহযোগীদের সঙ্গে মিলে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করতেন। তারা ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান-প্রদান করত। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছে সিটিটিসি।

তিনি বলেন- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রমবিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। এর ফলে হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এই ফখরুল ইসলাম হুজির সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেন। ওই হামলার মাধ্যমে তিনি জানান দিতে চেয়েছিলেন যে, হুজি এখনো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, গ্রেপ্তার ফখরুল গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় চাকরি করতেন। সেখানে থেকে পরে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি যান। পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচিতি হন। মুফতি জাকির হোসেন যিনি পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার।

জাকির ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল জিহাদী ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণ নিতে যান। সেখানে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র-একে ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন ফখরুল।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন ফখরুল। অনুশীলনের সময় একে ৪৭সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় চার ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা দিতেন ফখরুল। এই সময়ে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয় তার। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর পুনরায় পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে আসেন।

আসাদুজ্জামান আরও জানান, গ্রেপ্তার হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস দিয়ে ‘মোরা সত্যের সৈনিক’ এর ‘অস্থায়ী মুসাফির’ ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি চালাতেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন এই অ্যাপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান প্রদান করতেন। তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে তার মাধ্যমে তার সংগঠনের পরিচিত দুয়েকজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেন।

যেভাবে হুজিকে পুনর্গঠন করতে চেয়েছিলেন ফখরুল : সিটিটিসি প্রধান বলেন- সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রমবিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। এর পরে হরকাতুল জিহাদ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত ও পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করতে চেয়েছিল হুজি : বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিলেন গ্রেপ্তাররা। ফখরুল ও তার ছেলে গ্রেপ্তার মো. সাইফুল ইসলাম অন্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। তারা রোহিঙ্গাদের সংগঠনে সম্পৃক্ত করতে মাঠে নামেন। ওই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে তাদের বিভিন্ন সময় মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দেন।

যেভাবে দেয়া হতো বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ

নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতি’র কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট শেয়ার করা হয়। একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানো সংক্রান্ত বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করে। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড অ্যাপসের চ্যানেল থেকে পাওয়া কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুয়েকজনকে হাতে-কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত