ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভা

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আপনারা (রাজশাহীবাসী) নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনাদের কাছে আবারও আহ্বান করব, আগামী নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কি না ওয়াদা চাই। এ সময় মাঠে সেøøাগান দিয়ে নেতাকর্মীরা ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেন।

গতকাল বিকালে রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, রাজশাহী সব সময় অবহেলিত ছিল। বিগত মেয়র নির্বাচনে আপনারা আমাদের ভোট দিয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করেছেন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিগত সময়ে সরকার রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে গত ১৪ বছরে শুধুমাত্র রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দিয়েছি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় মন্তব্য করে দলটির সভাপতি বলেন, এ সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এ সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। যেখানে ৪০ ভাগ দারিদ্র্য সীমা ছিল, আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সব ভাতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

রাজশাহীতে একটি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে আমরা এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করতে পারব।

‘আওয়ামী লীগ পালানোর সুযোগ পাবে না’, বিরোধী দলের নেতাদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ পালায় না, পালান আপনাদের নেতারা। জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল, আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম।

তিনি বলেন, আজকে আমি জানি, বিরোধী দল অনেক কথাই বলে। তারা আমাদের আবার নোটিশ দেয়। আবার বলে. আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। আমি এই বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করি, পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না। পিছু হটে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আবার ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে, তখনও আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল। তার বাচ্চা হয়েছিল, অপারেশন হয়েছিল, তাকে দেখতে। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমি যাব। এই কেস আমি মোকাবিলা করব। আমি দেশে ফিরে এসেছি। শুধুমাত্র বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে। আজকে যারা বলে পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ, আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই।

বিএনপি নেতৃত্বের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতারা কে? বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে। যে নাকি ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, পালিয়ে গিয়েছিল, সে কথা কি বিএনপি নেতাদের মনে নাই?

তিনি বলেন, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া, তারেক ও কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে। তার মধ্যে ৪০ কোটি টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।

জনসভার শুরুতে ৩২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আজকে কিছুক্ষণ আগে এক হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করলাম এবং ৩৭৫ কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। এ প্রকল্পগুলো আমি আপনাদের উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ অন্য নেতারা বক্তৃতা করেন।

রাজশাহী হয়ে উঠে উৎসবের নগরী : রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষ্যে পুরো জনপদ উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। গতকাল সকাল থেকেই জনসভার মাঠে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠের বাইরে আশপাশের এলাকাগুলোতেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। দুপুরের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মাদ্রাসা ময়দানের আশপাশের সড়ক তো বটেই, আশপাশের সড়কগুলোতে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষও। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দেয়ার জন্য দশটি বিশালাকৃতির এলইডি ডিসপ্লের ব্যবস্থা করা হয়। মাদ্রাসা মাঠে জায়গা না পেয়ে অনেকে ডিসপ্লের সামনে অবস্থান নেন।

দুপুর ১২টা থেকে জনসভা মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। তাদের আগে স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের সময় আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখরিত হয় জনসভাস্থল। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট ও টুপি পরে নেতাকর্মী-সমর্থকরা জনসভায় যোগ দেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত