ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার আরিফ জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশের সড়কে গত ২২ জানুয়ারি ভোরে ছুরিকাঘাতে খুন হন খলু মিয়া। হত্যার রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন মামলার ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এক পর্যায়ে অনেক আগের একটি ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আরিফের সঙ্গে তার মায়ের ফোনালাপ সূত্রে বেরিয়ে আসে সেই হত্যার রহস্য।

জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে আরিফ। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নিহতের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন। গত শনিবার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আরিফকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) একেএম হাফিজ আক্তার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ২২ জানুয়ারি ধলপুর এলাকায় একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি হন। খবর পেয়ে মাতারবাড়ী থানার পুলিশ ঢামেকে পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসক ভুক্তভোগীকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পায়। ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভুক্তভোগী গোলাপবাগ থেকে হেঁটে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগীর কাছে প্রাপ্ত জিনিসপত্র ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় জানা যায়, তার নাম খলু মিয়া। তিনি নারায়নগঞ্জের রূপসী এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেদিন তিনি গাইবান্ধা থেকে সোনালী পরিবহনে রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় গোলাপবাগে পৌঁছান। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতের শিকার হন।

একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, এ ঘটনার তদন্তে নেমে বেশকিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৬ জানুয়ারি একটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকার নিজ বাসা থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের পর আরিফ তার মাকে ফোনালাপে জানায়, অন্য কোনও ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, আগের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আরিফের এই বক্তব্যটি সন্দেহজনক হওয়ায় খলু মিয়া হত্যা মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর ভিত্তিতে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে খলু মিয়াকে খুনের দায় স্বীকার করে সে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ জানায়, একাধিক ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় সে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। কিন্তু খুনের ঘটনার পর নিজেকে রক্ষা করতে আগের ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার হতে বাসায় অবস্থান করছিল। আরিফ আরও জানায়, ঘটনার সময় সে অন্যান্য সহযোগীর সঙ্গে ধলপুর নতুন রাস্তায় একটি ব্যাটারির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ভুক্তভোগী রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে গলায় ছুরি ধরলে তিনি প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। ঘটনার এক পর্যায়ে ছিনতাইকারী চক্রটি তার বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার।

এক প্রশ্নের জবাবে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ঢাকা শহর ২৪ ঘণ্টা কর্মব্যস্ত থাকে। দিনে যেমন অফিস থাকে, অফিসে সবাই ব্যস্ত থাকে। রাতের ঢাকায় ব্যাপক হারে ট্রাক ঢোকে। কাঁচাবাজারে বিভিন্ন পণ্যের বাজার খুবই সক্রিয় থাকে। আর রাতে বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে বাইরে থেকে যখন লোকজন চলাচল করে, তখন অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। তিনি বলেন, অপরাধ যারাই করে আমাদের প্রথম কাজ হলো ঘটনার ধরন ও অপরাধীকে চিহ্নিত করা। অপরাধীদের সবসময় নজরদারিতে রাখতে আমরা একটা তালিকা করছি। যাতে অপরাধ কমে যায়। চুরি ছিনতাইকারীদের ব্যাপক হারে গ্রেপ্তাার করতে পারলে অপরাধ কমে। তবে যখন তারা বেরিয়ে আসে তখন আবার বেড়ে যায়। অপরাধের যে প্রক্রিয়া সেটি শুধু পুলিশিং দিয়ে একদম নির্মূল করা বিশ্বের কোথাও নেই। কারাগারে গিয়ে সংশোধন বা অন্য কোনও পেশায় যাবে সেটাও হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে যদি আমরা উন্নয়নের দিকে আরও অগ্রসর হতে পারি, যদি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে রাজধানীতে অপরাধ প্রবণতা কমবে।