পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ ভাগ শিক্ষার্থী কলা অনুষদের

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রকীবুল হক

দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে শিক্ষার মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা যেখানে দক্ষতা ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় জোর দেয়ার কথা বলছেন, সেখানে সাধারণ শিক্ষা নিয়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়ছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষাধারায় উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন কলা ও মানবিক অনুষদে। ৪১ দশমিক ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এই অনুষদে রয়েছে। এর পরেই রয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ। এতে শিক্ষার্থী ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশ পড়ছেন চারুকলায়। আর প্রকৌশল ও কারিগরিতে আছেন এক দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদে বেশি শিক্ষার্থী পড়লেও সংখ্যার বিচারে খুবই কম। এ অনুষদে শিক্ষার্থীর শতকরা হার ৪৩ দশমিক ৩৩ জন। এরপরেই রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন/ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ। ২৩ দশমিক ০২ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ছে এই অনুষদে। আর সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী আছে চারুকলায় শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে দেয়া ২০২১ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান সম্বলিত প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং উচ্চ শিক্ষাস্তরে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা অতীব জরুরি বলে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে ইউজিসি। সুপারিশে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক বিস্তৃতি ও সম্প্রসারণ ঘটেছে। একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণীত ও তা বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়র গ্রাজুয়েটরা যুগের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং এর ফলে বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত হবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সম্মিলিতভাবে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নকল্পে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

ইউজিসির প্রতিবেদন সূত্রমতে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২১ সালে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৯ লাখ ২১ হাজার ২২০ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪১ দশমিক ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই কলা ও মানবিক অনুষদের। এ অনুষদে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ শতাংশ এবং ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

এছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ২৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ; শিক্ষায় শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ; চারুকলায় শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশ, বাণিজ্যে ১৯ শতাংশ; আইনে শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ; ফার্মেসিতে শূন্য দশমিক ০৭ শতাংশ; বিজ্ঞানে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ; জীববিজ্ঞানে শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ; চিকিৎসায় শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ; কৃষিতে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ; প্রকৌশল ও কারিগরিতে এক দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ডিপ্লোমা/সার্টিফিকেট ও অন্যান্য অনুষদে এক দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত ছিল।

অন্যদিকে ২০২১ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ১০৭ জন। এরমধ্যে কলা ও মানবিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৭১৩ জন (শতকরা হার ১০ দশমিক ৫৫); সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯ হাজার ৭৪ জন (২ দশমিক ৯২ শতাংশ); শিক্ষা অনুষদে শিক্ষার্র্থ সংখ্যা এক হাজার ৫৬ জন (শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ); চারুকলায় ৯৯৬ জন (শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ); বিজ্ঞানে ২১ হাজার ৮৫২ জন (৭ দশমিক ০৪ শতাংশ); জীববিজ্ঞানে ৩ হাজার ৪০৭ জন (এক দশমিক ১০ শতাংশ); ব্যবসায় প্রশাসন/ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ৭১ হাজার ৩৮৬ জন (২৩ দশমিক ০২ শতাংশ); আইনে ১৯ হাজার ১৫৫ জন (৬ দশমিক ১৭ শতাংশ); ফার্মেসিতে ১০ হাজার ৪৪৮ জন (৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ); কৃষিতে এক হাজার ৫৯২ জন (শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ); প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৪ জন ( ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ) এবং ডিপ্লোমা/সার্টিফিকেট ও অন্যান্য অনুষদে ৪ হাজার ৪৪ জন (এক দশমিক ৩০ শতাংশ) শিক্ষার্থী ছিল।

অনুষদভিত্তিক শিক্ষার্থীদের এ পরিসংখ্যান সম্পর্কে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ প্রফেসর অধ্যাপক ড. মোহা. হাছানাত আলী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুষদভিত্তিক শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যান খুবই অ্যালার্মিং। কারণ বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, অনেকে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের প্রস্ততি নিচ্ছে- এরকম একটি মুহূর্তে সরকারি বিশাল অর্থ ব্যয় করে অনুৎপাদনশীল শিক্ষা চালু রাখায় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত বেকার তৈরি করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় এটি কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে না।

তিনি বলেন, বর্তমান পেক্ষাপটে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা চালু করতে হবে। একইসঙ্গে কলা অনুষদের যেসব বিষয় সময়ের প্রেক্ষাপটে অপ্রয়োজনীয় বা চাকরির বাজারে চাহিদা নেই- সেগুলোকে আস্তে আস্তে কমিয়ে দিতে হবে। সেইসঙ্গে দক্ষতা ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় জোর দিতে হবে।