শুরু হলো ভাষার মাস, অনুপ্রেরণার শাশ্বত প্রতীক

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি। বাঙালি জাতির জীবনে রক্তস্নাত এই মাসটি এলেই ভাষা আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা জাতি স্মরণ করে। স্মৃতিতে ভেসে ওঠে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ ভাষা শহিদদের নাম। সাতচল্লিশে দেশভাগের পর যখন বাঙালির ভাষার ওপর আঘাত এলো, তখন বুকের রক্তে লেখা হলো নতুন এক ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের আত্মত্যাগের পথ ধরেই পরবর্তীতে জাতি গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা পায়। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশ এগিয়ে যায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, জাতির স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভাষা আন্দোলন সব সময় আলোকবর্তিকার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে। এখনো জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে ভাষা আন্দোলন আমাদের প্রেরণা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। ভাষা আন্দোলন তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার উৎস। ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার নজির কেবল বাঙালিরই রয়েছে।

১৯৫২ সালের এ মাসেই ভাষা আন্দোলন তীব্রতর রূপ লাভ করেছিল। মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে। আর এই আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম গুলি চালানো হয়েছিল। তাতে অমূল্য প্রাণ সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর ও বরকত মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাই গভীর বেদনায়, মহিমায় ও পবিত্র আবেগে ওই দিনটি ইতিহাসের পাতায় রক্তের অক্ষরে লেখা হয়ে যায়। শহীদদের আত্মদান একটি কিংবদন্তী রূপ লাভ করে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি একটি ধ্বনি, একটি প্রতীক ও জাতির জাগরণের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি অঙ্গীকারের মাস, প্রত্যয়ের মাস। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সমাজে, রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শপথ নেয়ার মাস। ভাষার মাসে ভাষাকে নিয়ে নানা আয়োজন শুরু হয়। তবে, শুধু ভাষা নয় বরং জাতি হিসেবে আমাদের করণীয় নিয়েও আলোচনা চলে। শিল্প-সাহিত্য-সংগীতসহ শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে একুশ নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে আসে। একুশে উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমির বইমেলা সারা দেশের সাহিত্যানুরাগীদের জন্য এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। আর এই মেলা আজ স্বশরীরে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একুশে ফেব্রুয়ারি বলতে ১৯৫২ সালের কেবল সেই দিনটি নয়, এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই ১৯৪৭ সাল থেকে। ১৯৪৭ সালের ১৭ মে হায়দরাবাদে এক উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু’। তার সঙ্গে সূর মেলান আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন। প্রতিবাদে ২৯ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘আজাদ’ পত্রিকায় বলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, তবে দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যায়।

পাকিস্তান গঠনের পরে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর করাচিতে পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে পাকিস্তান গণপরিষদের কাছে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও প্রাদেশিক সরকারগুলোর কাজ চালানোর মাধ্যম রূপে মেনে নেয়ার সুপারিশ করা হয়। সেইসঙ্গে সমগ্র পাকিস্তানে প্রাথমিক শিক্ষায় উর্দুকে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন তমদ্দুন মজরিশের সম্পাদক আবুল কাসেম। বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান, কল্যাণ দাশগুপ্ত, একেএম আহসান, এস আহমদ প্রমুখ। রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমদ।