ছয় আসনের উপনির্বাচন

ভোটার আগ্রহ কম বেড়েছে অনীহা

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। ভোট নিয়ে নানা কারণে আগ্রহ হারিয়েছেন ভোটাররা, বেড়েছে ভোটের প্রতি অনিহা। তবে এ উপনির্বাচনে কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় নির্ধারিত সময়েই আসনগুলোতে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকভল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হয়।

উপনির্বাচনের ভোটে অনিয়মের উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সাধারণভাবে বলা চলে ছয়টি আসনে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। তবে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তারা অনুমান করছেন ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোট গণনা শেষে এটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তারা সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নিয়েছেন। টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে নজর রেখেছেন। অনিয়মের উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কয়েকটি জায়গায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। দুয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষে লোক দেখা গেছে। এমন সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, গণমাধ্যমের খবর দেখে তারা ওই এলাকা থেকে তথ্য নিয়েছেন। একটি কেন্দ্রে একজন নারী ভোটার তার দুই বাচ্চাকে নিয়ে বুথে ঢুকেছেন। আরেকটি কেন্দ্রে এক ভদ্র মহিলা একজন অসুস্থ লোককে ভোট দিতে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন।

সিইসি বলেন, এগুলো হতে পারে। এগুলোকে আমরা খুব গুরুতর বা ব্যাপক মনে করছি না। ভোটের ফলাফল পাল্টে যেতে পারে-এ ধরনের ঘটনা আমাদের কাছে মনে হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, ভোটের মাঠে ইসির নিয়ন্ত্রণ নেই। একজন প্রার্থী নিখোঁজ ছিলেন। নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, এটা আমি মেনে নিতে রাজি না। আমরা এখান থেকে বসে সর্বোত্তমভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। সংযোগ রক্ষা করে চলেছি।

সিইসি বলেন, ইসিকে নির্ভর করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর। ইসিকে প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়, নির্ভরও করতে হয়। নিরপেক্ষ থাকতে তাদের বারবার বার্তা দেয়া হচ্ছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে তারা যে সহায়তা পাচ্ছেন, তা নির্ভরযোগ্য, তাতে তারা সন্তুষ্ট।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে ভোটার কম থাকা নিয়ে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। তিনি বলেছেন, প্রার্থীরা ভোটারদের মোটিভেট (উদ্বুদ্ধ) করতে পারেননি। ভোটারদেরও ইচ্ছা থাকতে হবে। রিটার্নিং অফিসার মো. শাহগীর আলম আরও বলেন, ভোটার আনা প্রার্থীদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, ভোটার আনা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব না, এটি প্রার্থীদের দায়িত্ব। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে আবহাওয়া একটি কারণ হতে পারে, প্রার্থীরা ভোটারদের মোটিভেট করতে পারেননি, সেটাও হতে পারে। ইভিএমে কোনো সমস্যা হলে তা ঠিক করার জন্য দুই উপজেলায় ১০টি টেকনিক্যাল রেসপন্স টিম (কারিগরি সহায়ক দল) কাজ করেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সদর উপজেলার শান্তির মোড় ও সোনার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

লাঠিপেটা ও অন্তত ২০টি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের পদত্যাগের পর এ আসনে গতকাল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটযুদ্ধে লড়েন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওদুদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক (আপেল) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান খান (টেলিভিশন)।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, দুপুর ২টার দিকে শান্তির মোড় এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকরা। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর দুটি নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এ সময় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকার সমর্থকদের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। পুলিশ মোটরসাইকেল দুটি সদর থানায় নিয়ে যায়। শান্তির মোড় থেকে সরে গিয়ে নৌকার সমর্থকরা সোনার মোড়ে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিয়ে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। এছাড়া বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি অনেকের আস্থা না থাকায় ভোট দিতে অসেননি অনেকে। এ কারণে ছয় আসনের ভোটে আগে থেকে তেমন অগ্রহ উত্তাপ ছিল না।