সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদন নতুন ধারণা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এ বিষয়ে যেসব কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে তাদের সাথে আলোচনা চলছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাতারবাড়ী, মহেশখালী বা বাঁশখালীতে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
গতকাল জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আনোয়ার হোসেন তার প্রশ্নে কক্সবাজার-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সুবিধাজনক স্থানে সাগরের পানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনা আছে কি না, তা জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা ব্যয়সাপেক্ষে এবং তা বাণিজ্যিকভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই।
সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারণার কথা জানান শেখ হাসিনা। এটা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খরচ কমে এলে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পদক্ষেপের ফলে ২০২২ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ১ হাজার ৫৫৮টি সেতু ও ৭ হাজার ৪৯৮টি কালভার্ট নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ৯০৮ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার সড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২৩৫ দশমিক শূন্য ৩ কিলোমিটার এরই মধ্যে সড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত হয়েছে।
জাতিয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিট্যান্সপ্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স যথাক্রমে ২৪.৭৭ এবং ২১.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ৪৯৩.২৬ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে। রেমিট্যান্সে প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা জানান, পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে কর্মীদের উৎসাহিত করা; অধিক কর্মী পাঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্সে প্রবাহ বৃদ্ধি করা; অধিক রেমিট্যান্সে পাঠাতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অনিবাসী/প্রবাসী বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের জন্য সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা উল্লেখযোগ্য।
তিনি জানান, প্রবাসীদের মাঝে রেমিট্যান্সে প্রেরণকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৭ জন এবং বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক ক্যাটাগরিতে ১০ জনসহ মোট ৬৭ জনকে সিআইপি (এনআরবি) ২০২০ ঘোষণাপূর্বক সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও সিআইপি কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অধিক হারে দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৮ হতে ৯৫-এ উন্নীত করা হয়েছে। ‘৪০ উপজেলায় ৪০ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম জেলায় একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি’ স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর মেলানদহ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী উদ্বোধন করেন। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করে আসছে। সরকার এরই মধ্যে প্রণোদনার বিষয়টি ২ থেকে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, প্রবাসী কর্মীদের অর্জিত অর্থ বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাসগুলো অব্যাহত প্রচারণা চালিয়ে আসছে। প্রতি বছর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’সহ দূতাবাসের সব অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিট্যান্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে।
নতুন শ্রম বাজার অনুসন্ধান, বিদ্যমান বাজার সংহত করা এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলো আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।