ডিসিসিআই’র অভিমত

আইএমএফ’র ঋণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি, সোমবার রাতে আইএমএফের বোর্ডের সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কমাতে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইএমএফের এ ঋণ সাহায্য করবে। আইএমএফের পক্ষ থেকে ঋণ প্রাপ্তির অনুমোদন বাংলাদেশের ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।

সামীর সাত্তার মনে করেন, বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও পলিসি সংস্কারের শর্তারোপ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-আর্থিক খাত, নীতি কাঠামো, জ্বালানি খাত, সরকারি অর্থব্যবস্থা, স্থানীয় রাজস্ব বৃদ্ধি, জলবায়ু স্থিতিশীল করতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ইত্যাদি। তবে তিনি আইএমএফের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ ঋণ সুবিধা বাংলাদেশকে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে। ডিসিসিআই সভাপতি মো. সামীর সাত্তার মনে করেন, এই ঋণ প্রাপ্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে, যা আমাদের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে। এমনকি সরকার আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলার কঠোর শর্তাবলী প্রত্যাহারের বিষয়ে বিবেচনা করার সুযোগ পাবে। আসন্ন রামজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনা করে ঋণটি অবশ্যই ব্যবসায়িকদের জন্য স্বস্তি দেবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বিশ্বাস করেন যে, সরকার ইতিমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করেছে।

উদাহরণস্বরূপ ব্যারিস্টার সাত্তার বলেন, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত সাম্প্রতিক মুদ্রানীতিতে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণের সুদ হারের সীমা শিথিল করা হয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনয়নে ক্রমান্বয়ে বাজার-ভিত্তিক এবং একক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নতুন আয়কর আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে যার অন্যতম লক্ষ্য হলো করজাল বাড়ানো, যাতে করে দেশীয় রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করা যায়। পাশাপাশি নতুন আয়কর আইন অটোমেশনের উপর গুরুত্বারোপ করেছে, যার ফলশ্রুতিতে বিদেশি বিনিয়াগ আকৃষ্ট হবে। ব্যারিস্টার সাত্তার আরোও মনে করেন, সরকার অদূর ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেট-ঘাটতি হ্রাস এবং কর-জিডিপি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে, অন্যান্য আরও সংস্কার সরকারের বিবেচনাধীন আছে।

ব্যারিস্টার সাত্তার আশা প্রকাশ করেন যে, সরকার সব খাতে সুশাসন নিশ্চিত করবে এবং তা বাজয় রাখবে। তিনি সরকারকে এই ঋণের যেকোন শর্ত সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান যাতে বাংলাদেশ আইএমএফ কর্তৃক নির্ধারিত শর্তগুলো প্রতিপালনে এগিয়ে থাকতে পারে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ চেয়েছে, এর মধ্যে তিন ধরনের ঋণ রয়েছে। এগুলো হলো- বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)। ইসিএফ ও ইএফএফ থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। আরএসএফ থেকে পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার। এই ঋণ পাওয়া যাবে ৪২ মাসে ৭ কিস্তিতে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়তা করবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সরকার যে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়নেও সহায়তা করবে এই ঋণ।