ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আত্ম-আবিষ্কারের সূচনালগ্ন ভাষা আন্দোলন

আত্ম-আবিষ্কারের সূচনালগ্ন ভাষা আন্দোলন

স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা বাদ দিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনকে বলা আমাদের আত্ম-আবিষ্কার বা স্বরূপ অন্বেষার সূচনালগ্ন। ভাষা আন্দোলনের হাত ধরেই আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ আন্দোলনের তাৎপর্য ভাষা বা সাংস্কৃতিক স্বাধিকারের দাবি ছাড়িয়ে জাতীয় স্বাধীনতা ও মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের পরিণত হয়। ব্যাপক গণমানুষের ক্ষোভ-প্রতিবাদের জ্বালামুখ হিসেবে কাজ করেছিল। সেদিন ভাষা আন্দোলনের ঘটনাটি।

‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলনের মাধ্যমেই প্রথম বাংলা ভাষার রাষ্ট্রের ধারণাটির জন্ম হয় এবং এ ধারণাই পরবর্তীতে বিভিন্ন বাঙালি জাতীয়তা আন্দোলন, যেমন ছয় দফা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রেরণা জোগায়। ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল। ছিল বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের দুইটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে পার্থক্য ছিল প্রচুর। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষাণা করে, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণের মাধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল) এ সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। এ ঘোষণার ফলে আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিছিল, সভা-সমাবেশ বেআইনি ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক কর্মী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও আনেকে। এ ঘটনায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষোভের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। দেশব্যাপী এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ হিসাবে দল পুনর্গঠন করা হয়)। অবাশেষে কেন্দ্রীয় সরকার গণআন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন ও মানুষের ভাষা ও কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

আলোকিত বাংলাদেশ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত