নির্বাচনে ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে

হিরো আলম ‘হিরো’ হয়ে থাকলেন

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুর ইসলাম

বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনের মধ্যে বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের প্রার্থী হিরো আলমই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তিনি এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঠে লড়াই করে জনগণের কাছে ‘হিরো’ হয়ে রইলেন। অপরাপর আসনের ভোট নিয়ে আলোচনা থাকলেও ওই দুটি আসন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ ছিল।

সূত্র জানায়, ভোটের পরে সব মহলে হিরো আলমকে নিয়ে আলোচনা চলছে। তার লড়াই দেখে তাকে অনেকে সাধুবাদ দিচ্ছেন। তবে এ ভোটের মাধ্যমে হিরো আলম ইতিহাসে ‘হিরো’ হয়ে থাকবেন।

নির্বাচনি কারচুপির অভিযোগ এনে হিরো আলম বলেছেন, ‘ভোট চুরি হয়নি, লজ্জাজনকভাবে ফলাফল চুরি হয়েছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে গিয়ে আমাকে বিপুল ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত কর্মকর্তারা আমার মতো অশিক্ষিত মূর্খ ছেলেকে ‘স্যার’ ডাকতে হবে, এতে তাদের মানসম্মান থাকবে না, শুধু এই কারণে মুহূর্তের মধ্যে ফলাফল পাল্টে দিয়েছেন’।

তিনি বলেন, কেন্দ্রের ফলাফল নির্বাচনি এজেন্টদের কাছে সরবরাহ করার কথা থাকলেও বেশ কিছু কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের কাছে ফলাফল সরবরাহ করা হয়নি। আবার নন্দীগ্রাম উপজেলায় স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ফলাফল ঘোষণার সময় ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ থেকে ৩৯টি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা করা হয়। একতারার বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর হঠাৎ ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রাখা হয়। কিছু সময় চুপচাপ থাকার পর ১০ কেন্দ্রের ফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা না করে হঠাৎ জাসদের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেনের মশাল প্রতীকে বেশি ভোট দেখিয়ে বিজয়ী করা হয়।

দশ কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে হিরো আলম বলেন, ওইসব কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণার কারণ কী? একটি কেন্দ্রে মশাল প্রতীকে ভোট পড়েছে ২৮, অথচ গণনার সময় বেশি ভোট দেখানো হয়েছে। আরেকটি কেন্দ্রে একতারায় ৩০৭ ভোট পড়েছে, গণনার সময় ৭ ভোট দেখানো হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের ডেকেছি। সব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে হাইকোর্টে রিট করব। ফলাফল পাল্টিয়ে আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, সেটা দেশবাসীর কাছে প্রমাণ করেই ছাড়ব।

ভোটের ফলাফল নিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, হিরো আলমের এজেন্টকে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল দেয়া হয়নি কথাটি সঠিক নয়। কারণ, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, উনি নন্দিগ্রামে এজেন্ট দেননি। ডিসি সাহেবের সঙ্গে আমার যেটা কথা হয়েছে, তিনি আমাকে বলেছেন, আমি নিজে কেন্দ্র ভিজিট করেছি অনেকগুলো। উনার কোনো এজেন্ট পাইনি। কাহালুতে উনার কিছু এজেন্ট ছিল। সেখানে অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট নাই বা রেজাল্ট দেয়া হয়নি এমন কোনো অভিযোগ নাই।

তিনি বলেন, ভোটের আগের প্রক্রিয়াগুলো বা আচরণবিধি যে খুব একটা ভঙ্গ হয়েছে তা আমাদের কাছে মনে হয়নি। কোনো কিছু আমার নোটিশে আসলে সঙ্গে সঙ্গে আমি ডিসি এসপিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দৃষ্টিতে দিয়েছি। কোনো প্রার্থী কিন্তু কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। নির্বাচনের পূর্বের প্রস্তুতি ভালো ছিল। আর ভোটের দিন কোনো অনিয়মই হয়নি আমার দৃষ্টিতে। বিশেষ করে নর্থ বেঙ্গলে বড় ধরনের কারচুপি, ভেতরে ভোট ডাকাতি বা এর ভোটও দিয়েছে এরকম কিছু হয়নি। আমার মনে হয়, পুরো ভোটটা সন্তুষ্টজনক হয়েছে।

হিরো আলমের অসন্তুষ্ট নিয়ে রাশেদা সুলতানা বলেন, পত্রিকায় যেটুকু দেখেছি হিরো আলম সাহেব তার একটু আপত্তি বা উনি একটু অসন্তুষ্ট হয়েছেন। গণমাধ্যমে আসার পর আমরা মূলত এটা নিয়েই সকাল থেকে আমলে নিয়ে রেকি করার চেষ্টা করেছি। বগুড়ার ডিসির সঙ্গে কথা বলা, জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার, ইউএনও প্রত্যেকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। সিইসি নিজে কথা বলেছেন। ডিসি সাহেব আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, রেজাল্ট হান্ড্রেড পারসেন্ট সঠিক।

আর কোনো তদন্তে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের কাছে যে রেজাল্ট শিট আছে, আমরা নিজেরাও একটু ক্যালকুলেট করে দেখলাম যে, কোথাও কোনো ব্যত্যয় নেই। আমাদের দেশের কালচারটা কিন্তু এরকমই। একজন প্রার্থী যখন হেরে যায় তখন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা দেখা যায়। শুধু হিরো আলম সাহেব না, আমরা যতগুলো নির্বাচন করলাম সব জায়গাতেই এই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। উনি (হিরো আলম) হেরে গেছেন, উনার কষ্ট হয়েছে। কষ্ট নানানভাবে প্রকাশ করছেন। উনি এটা করতেই পারেন। একজন মানুষ বললেই তো আর সেটা হয়ে যায় না। প্রমাণ তো থাকতে হবে। ওয়েব সাইটে ফলাফল প্রকাশ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো সরকারিভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আমরা যেটি পেয়েছি সেটি বেসরকারিভাবে।

অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই মুখে বলে ঝড় তোলে কিন্তু প্রমাণ নিয়ে আমাদের কাছে আসে না। আমাদের সময়ে যত নির্বাচন হয়েছে তারা কেউ আদালতে গেছে বলে আমার তো জানা নেই। কুমিল্লা (কুমিল্লা সিটি করপোরেশন) নিয়ে এতো কথা হলো। কই উনারা তো আদালতে গেলেন না। উনি (হিরো আলম) বলেছেন যাব, গেলে যাবেন। আমি তো অনেক কথাই মুখে বলতে পারি। তা প্রমাণ তো হতে হবে। অভিযোগ দেয়া আর অভিযোগ প্রমাণ করা দুইটার মধ্যে কিন্তু অনেক ফারাক।

ইভিএমের ভোটে রেজাল্ট দিতে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর কিন্তু অনেক কাজ থাকে। চারটা, পাঁচটা রেজাল্ট শিট তৈরি করতে হয়। সবগুলো যখন কম্পাইল্ড করতে বা দিতে যায় বারে বারে কিন্তু তা ক্রস চেক করতে হয়। তা না হলে হুট করে যদি একটা ভুল হয়ে যায়, ভুল হতেই পারে। এজন্য মিলাতে সময় লেগে যায়। সবগুলো মিলিয়ে প্রস্তুত করতে সময় লেগে যায়। আর একটা জিনিস আমি বলবো সব মানুষের এক ধরনের ক্যাপাসিটি থাকে না। নতুনদের কাজগুলো রপ্ত করতে সময় লাগে। সবাই হান্ড্রেড পারসেন্ট দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারবে এটা আশা করা যায় না।

সিসি ক্যামেরা না থাকার কারণে ভোট পর্যবেক্ষণে সমস্যা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ডিরেক্ট একটা জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি। সেটা যে ধরনের আর ভায়া মাধ্যম হয়ে আসতে এটার অসুবিধা এটা তো থাকবেই। আমি স্বীকার করলেই কি আর না করলেই কি। এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সিসি ক্যামেরা থাকলে অবশ্যই ভালো হয়। সিসি ক্যামেরা থাকলে আমরা নিজের চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। সিসি ক্যামেরা হলে ভালো হয়। আমি মনে করি, সিসি ক্যামেরা থাকলে আরও অনেক বেশি স্বচ্ছভাবে কাজ করা সহজ হয়। এটি বলতে কোনো দ্বিধা নেই।

আগামী নির্বাচনের জন্য এটি নেতিবাচক বার্তা বহন করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না। আমি সব সময় নিজের ভেতর যদি নেতিবাচকটা খুঁজে বের করি তাহলে কিন্তু আমার জন্য সবকিছু নেতিবাচক। আর আমি যদি পজেটিভ চিন্তা করি, তাহলে আমি কিন্তু নেতিবাচক কিছু দেখব না। যারা আমাদের কাজ পছন্দ করবে না, তারা কোনো দিনই করবে না। যেগুলো নিয়ে অভিযোগ আছে সেগুলো আমরা অবশ্যই যাচাই বাছাই করব। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এটা মনে হচ্ছে না।