চেতনায় একুশ

বাংলা ভাষাকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পশ্চিত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিল। শিক্ষা সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী, পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলা ভাষাকে তাদের বিষয় তালিকা থেকে বাদ দেয়। স্টাম্প ও মুদ্রায় বাংলা ভাষার ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয়। যেখানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেও এর প্রচলন ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তমদ্দুন মজলিশ পূর্ববঙ্গের গণপরিষদের মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার এবং নুরুল আমিনকে নিয়ে বৈঠক করেন, যেন তারা সাধারণ পরিষদে এ ব্যাপারে কথা বলেন। এছাড়া তারা একই উদ্দেশ্যে পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে সোচ্চার হন পূর্ববঙ্গের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।

১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য একটি সংশোধনী আনেন। তার বক্তব্যে বাংলাকে অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে উল্লেখ করে ধীরেন্দ্রনাথ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি করেন। এছাড়া সরকারি কাগজে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। অনেক বিতর্কের পর সংশোধনীটি ভোটে বাতিল হয়ে যায়। সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে অনেক বাঙালি মুসলমান সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উত্থাপিত সংশোধনীটিকে সমর্থন করতে পারেননি।

গণপরিষদের এ ঘটনার প্রথম প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ঢাকায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের উদ্যোগে শহরের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করেন। তমদ্দুন মজলিশ এ সময় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্র-বুদ্ধিজীবীদের এক সমাবেশ হয়। সেখান থেকে ছাত্ররা ১১ মার্চ ধর্মঘট আহ্বান করেন এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তার পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানান। ১১ মার্চের কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য ১০ মার্চ ফজলুল হক হলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ মার্চ ভোরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা বের হয়ে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। সকালে ছাত্রদের একটি দল রমনা পোস্টঅফিসে গেলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রদের আরও একটি দল রমনা পোস্টঅফিসে গেলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রদের আরও একটি দল রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সচিবালয়ের সামনে নবাব আবদুল গণি রোডে পিকেটিংয়ে অংশ নেয়। তারা গণপরিষদ ভবন ভেঙেপড়া জগন্নাথ হলের মিলনায়তন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বর্ধমান হাউস (বর্তমান বাংলা একাডেমি) হাইকোর্ট ও সচিবালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে অফিস বর্জনের জন্য সবাইকে চাপ দিতে থাকে। ফলে বিভিন্ন স্থানে তাদের পুলিশের লাঠিচার্জের সম্মুখীন হতে হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা খাদ্যমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আফজল ও শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। এ বিক্ষোভ দমনের জন্য সেনাবাহিনী তলব করা হয়।

পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ব্রিগেডিয়ার আইয়ূব খান (পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি) মেজর পীরজাদার অধীনে একদল পদাতিক সৈন্য নিয়োগ করেন এবং স্বয়ং গণপরিষদে গিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনকে বাবুর্চিখানার মধ্য দিয়ে বের করে আনেন। বিকালে এর প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হলে পুলিশ সভা ভেঙে দেয় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, শওকত আলি, কাজী গোলাম মাহবুব প্রমুখ। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন নঈমুদ্দিন আহমদ।