সংসদ সদস্য হলে সবাইকে নিয়ে নতুন করে কিশোরগঞ্জ সাজাব

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোপূর্বে তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন দায়িত্বসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পারিবারেই জন্ম ও বেড়ে উঠা তার। ১৯৫২ সালে তার বাবা থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন সাদামাটা রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: আপনার রাজনীতির পথচলার শুরুটা কীভাবে?

কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন : আমরা পারিবারিকভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার বাবা ১৯৫২ সালে হোসেনপুর থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ করাটা অনেক কঠিন ছিল। আমার বাবাই আমাদের থানায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি চর্চা শুরু করেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। আমার বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামের শিষ্য ছিলেন। ছোটবেলা থেকে বাবাকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিটা শুরু করি। রাজনীতির কারণে বাবা প্রায় সময় বাড়িতে থাকতে পারতেন না। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে থাকতেন। আমার বাবা এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭৫ সালের  ১৫ই আগস্ট তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়তাম। সকালে দেখি বাবা মসজিদের ওস্তাদজিকে ধমক দিচ্ছেন, চিৎকার করছেন। পরে আমরা কাছে এসে জানতে পারলাম তিনি জানিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে নাকি হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবা প্রথমে তার কথা বিশ্বাস করতে পারেননি। পরবর্তীতে রেডিওতে বিষয়টি জানতে পারার পর; বাবা খুব কান্না করেছিলেন।

প্রশ্ন: ছাত্রলীগে আপনি কোন কোন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন?

মশিউর রহমান হুমায়ুন : কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হই। তখন আমার কোনো পদণ্ডপদবী ছিল না। এরপর  ১৯৮৬ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পুরোপুরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। সেখানে প্রথমে ছাত্রলীগের সদস্য, সহ-সম্পাদক পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, এরপর ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের স্কুল বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। 

প্রশ্ন: ছাত্রলীগ থেকে সাবেক হওয়ার পর রাজনৈতিক জীবনটা কেমন ছিল?

মশিউর রহমান হুমায়ুন : আমি ছাত্রলীগ থেকে সাবেক হওয়ার পর ২০০১ সালে এসে প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ শুরু করি। সেই থেকে নেত্রীর সঙ্গে আছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার সঙ্গে সাংগঠনিক সফর করেছি। নেত্রীর সঙ্গে থেকে রাজনীতির অনেক কিছুই শিখছি। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে দুইবার সহ-সম্পাদকদের দায়িত্ব পালন করেছি। 

প্রশ্ন: এলাকার রাজনীতিতে কবে সম্পৃক্ত হয়েছেন? 

মশিউর রহমান হুমায়ুন: ১৯৯৯ সাল থেকে আমি নিজ এলাকায় জনরাজনীতি শুরু করি। ছাত্রজীবন থেকেই এলাকার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমি এলাকার মানুষের সঙ্গে আছি। সমর্থ্য অনুযায়ী এলাকার মানুষদের সাহায্য-সহযোগিতার চেষ্টা করি। যতটুকু পারা যায়, সুখে-দুখে তাদের পাশে থাকা, দিন-দিন এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০১ সালে আমি এমপি হওয়ার জন্য দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলাম, তখন হয় নাই। তখন আলাউদ্দিন স্যার এমপি হলেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আমাদের আসন নির্ধারিত হয় কিশোরগঞ্জের সঙ্গে। তখন এমপি হন সৈয়দ আশরাফ ভাই। আমি তখন এমপি হওয়ার কথা চিন্তাও করি নাই। কারণ রাজনৈতিক শিষ্টাচার তো আমরা শিখেছি। সৈয়দ আশরাফ ভাইয়ের নির্বাচনি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় আমাদের বাড়ি থেকে, এটা আমাদের সৌভাগ্য।

প্রশ্ন: ২০২৪ সালের  নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী চাইলে আপনি এমপি হতে প্রস্তুত কিনা?

মশিউর রহমান হুমায়ুন : আমি দায়িত্ব নিয়ে মানুষের সেবা করার জন্য প্রস্তুত। ছাত্রলীগের রাজনীতির করার মধ্যদিয়ে আমি এ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। আমি নিজেকে সেভাবেই তৈরি করেছি। আল্লাহ রহমত করলে আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, আমি অবশ্যই মানুষের সেবা করার জন্য প্রস্তুত। এলাকার মানুষ আমার কাছে এসে আস্থা ও ভরসা পায়। আমি মন থেকে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করি। 

প্রশ্ন: এলাকা নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না?

মশিউর রহমান হুমায়ুন: আমার এলাকার নিয়ে আমার একটা স্বপ্ন আছে। সেটি হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য কিশোরগঞ্জ গড়ে তোলা। আমাদের শহরটা সুন্দর করা। এটা একটা ঐহিত্যবাহী জেলা। কিশোরগঞ্জকে আওয়ামী লীগের দুর্গ বলা যায়, অনেক বড়-বড় নেতার জন্ম হয়েছে এ মাটি থেকে । কিশোরগঞ্জ শহরের বাড়ি-ঘর অগোছালো। ড্রেনেজ ব্যবস্থায় সমস্যা রয়েছে। আমাদের কিশোরগঞ্জের অনেক কিছুতে সমস্যা রয়েছে। যানজটে জর্জরিত। আরো দশ বছর পর এটি কি অবস্থা হবে তা বলা যাচ্ছে না। আমরা চাইলে আমাদের শহরটাকে স্বপ্নের শহর বানাতে পারি। পুরো কিশোরগঞ্জে নিয়ে আমার ভাবনা রয়েছে। আমি এমপি হলে পুরো জেলার নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জকে নতুন করে সাজাতে চেষ্টা করব।

প্রশ্ন: দীর্ঘ দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সঙ্গে আপনি রয়েছেন, একজন মা হিসেবে তার সম্পর্কে জানতে চাই?

মশিউর রহমান হুমায়ুন : আমাদের মা খালা ফুফুরা যেমন ঠিক আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তেমনই। আমার এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় উনার আচার-আচরণ, ব্যবহার সবই আমাদের মা খালাদের মতো। উনি যে প্রধানমন্ত্রী, উনি যে রাষ্ট্রপতির মেয়ে, উনি যে জাতির পিতার কন্যা এমন মনোভাব, অহমিকা কখনই উনার মাঝে দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অমায়িক হৃদয়ের অধিকারী। এই শিক্ষাটা উনি পরিবার থেকে পেয়েছেন। উনি মানবতার মা এমনি-এমনি হননি, ওনার ব্যবহারের জন্য হয়েছেন। উনি সারাদেশের মানুষকে মায়ের মতো আগলে রেখেছেন। করোনার সময় দেখেছি, যারা সহযোগিতা চাইতে লজ্জা পেত, তিনি তাদের পরিচয় গোপন রেখেই সহযোগিতা করেছেন। জাতি হিসেবে আমরা সৌভাগ্যবান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মত একজন সরকারপ্রধানকে পেয়েছি। আমি নিজেও গৌরবান্বিত কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আমি পাইনি, তার কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিার সান্নিধ্য পেয়েছি। বাঙালি জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আমাদের দরকার।