রাষ্ট্রপতি প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আজ বসছে আওয়ামী লীগ

বঙ্গভবনের দৌড়ে এগিয়ে শিরীন শারমিন ও মসিউর রহমান

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আজ মঙ্গলবার সংসদীয় দলের বৈঠক করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভা কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে আগামী দিনে কে বসবে বঙ্গভবনে। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী ও সংসদীয় দলের একজন সদস্য বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতেই সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে।

সংসদ সচিবালয় জানা যায়, আওয়ামী লীগের সপ্তম সংসদীয় দলের সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী দলীয় এমপিদের যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

আগামী ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। একাধিক প্রার্থী থাকলে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ভোট গ্রহণ হবে। সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন।

সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর সমর্থক ও প্রস্তাবক হতে হয় সংসদ সদস্যদের। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবেন না বলে এরইমধ্যে জানিয়েছে। আর সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। তাই আজ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি প্রস্তাবক ও সমর্থক কারা হবেন, সেটাও চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

জানাযায়, আগামী ২৪ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে। তবে এই পদে এবারও ভোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেবে- তা প্রায় নিশ্চিত।

জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দলগুলোর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাছাড়া এই দলগুলোর আসন সংখ্যাও খুবই কম। প্রার্থী দিলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোটে জেতার সম্ভাবনা নেই।

আওয়ামী লীগ যাকে প্রার্থী করবে, তিনিই হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি- এটা নিশ্চিত। আর এ কারণেই রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ কাকে প্রার্থী করবে বা মনোনয়ন দেবে সেটি নিয়েই আলোচনা চলছে।

গত কয়েক দিন ধরে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে দুটি নাম ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। বার বার ঘুরে ফিরে ওই নাম দুটিই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতি সচেতন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। তাদের একজন হলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তবে এ দুজনের মধ্যে ড. মসিউর রহমান বেশি এগিয়ে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, সংবিধান অনুযায়ী দেশে যে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। সরকার প্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এরপরও জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ধরনের সংকট তৈরি হলে রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এসব বিষয় চিন্তায় রেখে তেমন একজনকেই আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পদে তিনি কাকে মনোনীত করবেন, সেই ইঙ্গিত দেননি।

যেভাবে হবে নির্বাচন : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনি কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেয়ার পর সংসদকক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এ নির্বাচনে ভোটার। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদকক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনি কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিকসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।যদিও ১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। আর ওই সময় বিরোধীদল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিজয়ী হন। এছাড়া প্রতিবার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর কমিশন গেজেটে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে একক প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।