১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় এসে পৌঁছেন পাকিস্তানের স্থপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে তিনি একটি ভাষণ দেন। তার ভাষণে তিনি ভাষা আন্দোলনকে পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও তিনি বলেন, পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক ভাষা নির্ধারিত হবে প্রদেশের অধিবাসীদের ভাষা অনুযায়ী। কিন্তু দ্ব্যর্থহীন চিত্তে তিনি ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয়।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, জনগণের মধ্যে যারা ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে, তারা পাকিস্তানের শক্র এবং তাদের কখনোই ক্ষমা করা হবে না। জিন্নাহর এ মন্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন উপস্থিত ছাত্রসহ জনতার একাংশ।
২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে গিয়ে তিনি একই ধরনের বক্তব্য রাখেন। তিনি উল্লেখ করেন, এ আন্দোলন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ এবং অভিযোগ করেন, কিছু লোক এর মাধ্যমে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে। যখন তিনি উর্দুর ব্যাপারে তার অবস্থানের পুনরুল্লেখ করেন, উপস্থিত ছাত্ররা সমস্বরে ‘না-না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। একই দিনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল জিন্নাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেন। এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন শামসুল হক, কামরুদ্দিন আহমদ, আবুল কাশেম, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন আহমদ, শামসুল আলম এবং নজরুল ইসলাম। কিন্তু জিন্নাহ খাজা নাজিমুদ্দিনের স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একপেশে এবং চাপের মুখে সম্পাদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেন। অনেক তর্ক-বির্তক ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জিন্নাহর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন। ২৮ মার্চ জিন্নাহ ঢাকা ত্যাগ করেন এবং সেদিন সন্ধ্যায় রেডিওতে তার দেয়া বক্তব্যে তার অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। জিন্নাহর ঢাকা ত্যাগের পর ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তমদ্দুন মজলিশের আহ্বায়ক শামসুল আলম তার দায়িত্ব মোহাম্মদ তোয়াহার কাছে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে তমদ্দুন মজলিশ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য কমিউনিস্টদের দায়ী করে একটি বিবৃতি প্রদান করে এবং পরে তারা আস্তে আস্তে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসে।