ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প

সর্বত্র লাশ, ক্ষীণ হয়ে আসছে জীবিতদের উদ্ধারের আশা

সর্বত্র লাশ, ক্ষীণ হয়ে আসছে জীবিতদের উদ্ধারের আশা

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস্তূপের ভেতর থেকে ক্ষণে ক্ষণে বের হয়ে আসছে লাশ আর লাশ। হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সর্বত্র লাশের ছড়াছড়ি। পুরোদমে উদ্ধার কাজ শুরু হলেও তীব্র ঠান্ডা ও তুষারপাতে তা ব্যাহত হচ্ছে।

ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। কেবল তুরস্কেই ৩ হাজার ৪১৯ জন মারা গেছে। আর সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মারা গেছে ১ হাজার ৬০২ জন। দুই দেশ মিলে ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ২১ জনে দাঁড়িয়েছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ার সরকার ও হাসপাতাল সূত্রের খবরে নিহতের এ সংখ্যা জানা গেছে। গুরুতর আহতদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা ধারণা করছেন নিহত মানুষের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। খবর বিবিসি, আল জাজিরা ও সিএনএন।

ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি ঘরের সঙ্গে শত শত বহুতল ভবন ধসে পড়ায় এসব ভবনের নিচে আটকা পড়েছে অসংখ্য মানুষ। গত সোমবার ভোরে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্পের পর অর্ধশতাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

হিমশীতল ও গুমোট আবহাওয়ার মধ্যেই দুই দেশের উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসাবশেষে আটকেপড়া মানুষদের জীবিত উদ্ধারের জন্য অপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভূমিকম্পে যেসব মানুষ প্রাণে বেঁচে গেছেন তারাও বহুতল ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে স্বজনদের উদ্ধারের আশায় খালি হাতেই অভিযানে অংশ নিয়েছেন।

ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন অনুভূত অব্যাহত থাকায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় তারা বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছে। ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা তুরস্ক ও সিরিয়ায় সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে। তুরস্কে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল তুরস্কে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্ককে সব ধরনের সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ বিশ্বের বহু দেশ সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তুরস্কের ভূমিকম্পের পর সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি কারাগারের বন্দিরা বিদ্রোহ করেছে। এ সময় অন্তত ২০ বন্দি কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে। তুর্কি সীমান্তের কাছে সিরিয়ার রাজো শহরের কারাগারে প্রায় দুই হাজার বন্দি রয়েছে। যাদের মধ্যে এক হাজার ৩০০ জনের মতো আইএস যোদ্ধা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া কারাগারে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর যোদ্ধাও রয়েছে।

কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর রাজো এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় কারাবন্দিরা বিদ্রোহ শুরু করে এবং কারাগারের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই সময় ২০ জন বন্দি পালিয়ে গেছে, যাদের আইএস জঙ্গি বলে মনে করা হয়।

এদিকে, ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় তীব্র ঠান্ডার মধ্যে বহু মানুষকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে অনেক মানুষ শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে নিয়োজিত উদ্ধারকর্মীরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের তৎপরতা চালাচ্ছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়া লোকদের বের করে আনতে দেরি হওয়ায় তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে আসছে। পানি ও অক্সিজেনের স্বল্পতাই ভুক্তভোগীদের বেঁচে থাকার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে তার দেশে ২ হাজার ৮০০টির বেশি ভবন ধসে পড়েছে। তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে আল-আকসা মসজিদে গায়েবানা জানাজা আদায় করেছে ফিলিস্তিনিরা।

তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের প্রধান জানিয়েছেন, ভয়াবহ ভূমিকম্পটিতে অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার ভবন ধসে পড়েছে। এছাড়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও কয়েক হাজার ভবন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তুরস্কে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় বিমানবন্দরের রানওয়েগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সহায়তা পৌঁছাতেও বিলম্ব হচ্ছে।

তুরস্কে ভূমিকম্পে ধসেপড়া ভবন থেকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৪৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পে অন্তত ৫ হাজার ৬০৬টি ভবন ধ্বংসে গেছে। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত ও নিহত?দের উদ্ধার করছেন।

এদিকে ভূমিকম্পে নিহতদের জন্য সপ্তাহব্যাপী শোক ঘোষণা করেছে তুরস্ক সরকার। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, ভূমিকম্পে নিহতদের জন্য তুরস্ক সাত দিনের জাতীয় শোক পালন করবে।

এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, সব জাতীয় ও বিদেশি প্রতিনিধি কার্যালয়ে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদের পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হবে।

ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় হাজার হাজার শিশু নিহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা। গতকাল জেনেভায় সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সংস্থাটি বর্তমানে নিহত শিশুদের নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়নি। সিরিয়া ও তুরস্ক উভয় জায়গায় অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের খোঁজ করছে। আবার এমন অনেক শিশুকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হয়েছে, যাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মারা গেছে।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের বিপর্যয়ে দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সংস্থার জরুরি কর্মকর্তা অ্যাডেলহেইড মার্শাং বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের মধ্য প্রায় ৫০ লাখ দুর্বল জনগোষ্ঠী রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত