মূল নিবন্ধন শুরু আজ

অস্বাভাবিক খরচ বাড়ায় বিপাকে হজযাত্রীরা

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি বছর পবিত্র হজ পালনে আগ্রহীদের মূল নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজ। প্রাক-নিবন্ধিত তালিকা থেকে কোটা অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যক হজযাত্রী প্যাকেজ মূল্য পরিশোধ করে এ নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ নিবন্ধ কার্যক্রম চলবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে এ বছর সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ আগের বছরের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা বেড়েছে। আর করোনাকালের আগের চেয়ে এবারের খরচ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার হজের এ অস্বাভাবিক খরচ বাড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীরা। কারণ করোনার আগে যে পরিমাণ টাকা জমা করে হজের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, করোনার কারণে দুই বছর এবং কোটা কম ও বয়সজনিত কারণে গত বছর তাদের অনেকে হজের সুযোগ পাননি। এ বছর পূর্ণ কোটায় সব বয়সিরা হজের সুযোগ পেলেও বাড়তি খরচ জোগাড় করা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন অনেকে।

সূত্রমতে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি হজ পালন করবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৬৮ জন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় সরকারিভাবে একটি হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। সরকারিভাবে গত বছর দুটি থাকলেও এবার ঘোষিত একটি প্যাকেজ অনুযায়ী, হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা ব্যয় হবে। গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা খরচ হয়েছিল।

পরে ২ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব। এতে কোরবানি ছাড়াই সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর আগের বছর যা ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।

সূত্রমতে, করোনাকালের আগে ২০১৯ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ২০২০ সালে সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও সে বছর করোনার কারণে কারো হজে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। গত বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

হজের খরচ বাড়ায় চরম বিপাকে পড়ার কথা জানিয়ে সাতক্ষীরার একজন হজযাত্রী জানান, ২০২০ সালে হজে যাওয়ার জন্য পেনশনের টাকা থেকে তিন টাকার কিছু বেশি জমা করে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু করোনার কারণে বন্ধ থাকায় সে বছর তার হজে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। একইভাবে কেটেছে ২০২১ সালও। গত বছর স্বল্প সংখ্যক হজে যাওয়ার সুযোগ পেলেও ৬৫ বছরের বেশি বয়স হওয়ার কারণে সেবারও তিনি সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবং সৌদি আরবের সব শর্ত উঠে যাওয়ায় এ বছর হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তবে সম্প্রতি ঘোষিত প্যাকেজে হজের খরচ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে আছেন এই হজযাত্রী। দেশের বহু যাত্রীর একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হজের খরচের বেশ কিছু খাতে খরচ বেড়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোয়াল্লেম ফি বাবদ প্রায় এক লাখ টাকা। এরপর বিমান ভাড়া প্রায় ৫৮ হাজার টাকা বেড়েছে। এছাড়া রিয়ালের মূল্য বৃদ্ধি বাবদ প্রায় সাড়ে ৬২ হাজার টাকা বেড়েছে।

হজের খরচ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ বছর বিমানভাড়া, মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়া ও পরিষেবা খরচ বেড়েছে। এর সঙ্গে ডলার ও সৌদি মুদ্রা রিয়েলের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিকভাবে হজ পালনের খরচ বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে হজ প্যাকেজের ব্যয় বৃদ্ধি হজ যাত্রীদের জন্য অবশ্যই চাপের। তবে এ আর্থিক চাপ যতটা সম্ভব কম রাখা যায়, সেই চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

হজের ক্ষেত্রে বয়সের বাধা প্রত্যাহার : এবছর হজ করার ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা থাকছে না। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দোহাইলাম। গতকাল মঙ্গলবার সৌদি দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত বছর ৬৫ বছরের বেশি ব্যক্তির ক্ষেত্রে একটি নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এবছর এটি আর থাকছে না।

এ বছর ১ লাখ ২৯ হাজার বাংলাদেশি হজ করতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, কোভিড টেস্ট এবারও বাধ্যতামূলক করা হবে কি না এ ঘোষণা পরে দেয়া হবে।